মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থা, মস্কো এক্সচেঞ্জে ডলার–ইউরো বেচাকেনা বন্ধ

0
30
ডলার–ইউরো

ডলার ও ইউরোর লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার প্রধান শেয়ার ও মুদ্রাবাজার মস্কো এক্সচেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে রাশিয়ার ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার এক দিন পরই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বুধবার ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে মস্কো এক্সচেঞ্জের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটি কেবল রাশিয়ার প্রধান শেয়ার ও মুদ্রাবাজারই নয়; বরং একই সঙ্গে মস্কো এক্সচেঞ্জ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নিকাশঘর হিসেবেও কাজ করে। সে কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে একটি বড় আর্থিক শাস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার সন্ধ্যায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, মস্কো এক্সচেঞ্জ গ্রুপের বিপক্ষে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে মার্কিন ডলার ও ইউরোভিত্তিক সম্পদের লেনদেন ও নিষ্পত্তি স্থগিত থাকবে।

রাশিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা কেনা এবং এর লেনদেন করার সক্ষমতাকে লক্ষ্য করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে সাধারণত দেশটির সরকার ও পুরো রুশ সমাজে শক্ত প্রতিক্রিয়া হয়।

রাশিয়ার অর্থনীতি কেমন করছে, তার একটি প্রধান সূচক হলো মুদ্রার বিনিময় হার। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরের তিন দশকে দেশটির মুদ্রা রুবলের অনেকবার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ নিয়ে রুশ সমাজে ভয় রয়েছে। ফলে অনেক রুশ নাগরিক পশ্চিমা মুদ্রায় তাঁদের অর্থ সঞ্চয় করতে পছন্দ করেন। আর অর্থনৈতিক সংকটের সময় তাঁরা রুবল বিক্রি করে দেন।

সোভিয়েত আমলে মুদ্রার একটি কালোবাজার গড়ে উঠেছিল। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক যে বিনিময় হার ঠিক করে দেওয়া হতো, তার সঙ্গে ওই বাজারের দামের আকাশ–পাতাল পার্থক্য থাকত।

নতুন দফার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব দ্রুত উত্তেজনা প্রশমিত করতে ব্যবস্থা নেয়। ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেকোনো কোম্পানি বা ব্যক্তি রাশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে মার্কিন ডলার ও ইউরো কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন। নিজস্ব হিসাবে যদি কারও ডলার থাকে, তাহলে তা নিরাপদ থাকবে।’

রুশরা অবশ্য মস্কো এক্সচেঞ্জের আওতার বাইরের যেকোনো ব্যবস্থা ব্যবহার করে ডলার ও ইউরো কেনাবেচা করতে পারবেন। তবে এতে করে তারল্যের ঘাটতি এবং দামের খুব বেশি হেরফের হতে পারে।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বেশির ভাগ রুশ কোম্পানি ও ব্যাংক ইতিমধ্যেই পশ্চিমা মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে। মস্কো এক্সচেঞ্জে এখন যত বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয়, তার বেশির ভাগই চীনা মুদ্রা ইউয়ান।

মুদ্রার কেনাবেচার যে পার্থক্য, সেটি স্প্রেড হিসেবে পরিচিত। বৃহম্পতিবার সকালে অনেক ব্যাংকে এই স্প্রেড ছিল ৩ থেকে ১০ রুবলের মধ্যে। সাধারণত বেশির ভাগ সময় তা-ই থাকে। তবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরপরই কেউ কেউ প্রতি ডলারের দাম ২০০ রুবল পর্যন্ত উঠিয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে বুধবার রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ৮৯ রুবলে নির্ধারণ করেছিল।

সর্বশেষ দফার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.