মার্কিন অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করল ভারত: রয়টার্স

0
22
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে করমর্দন করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি–১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ওয়াশিংটন ডিসি, ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নতুন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছে ভারত। ভারতের তিনজন সরকারি কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পর সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। অস্ত্র ও বিমান কেনা স্থগিত করা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম বড় ধরনের অসন্তোষের প্রকাশ।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে শিগগিরই ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে কিছু অস্ত্র ও বিমান কেনার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুই কর্মকর্তা জানান, রাজনাথের সেই সফর বাতিল করা হয়েছে।

ট্রাম্প ৬ আগস্ট ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। কারণ, দিল্লি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ভারতের এই তেল কেনা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থের জোগান দিচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে সর্বোচ্চ হারের কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম।

ট্রাম্প আগে অনেকবার হঠাৎ করে শুল্কের হার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বদলেছেন। ভারত বলেছে, তারা এখনো ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। একজন কর্মকর্তা জানান, শুল্ক এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পরিষ্কার হলে প্রতিরক্ষা খাতে কেনাকাটা এগোতে পারে। তবে এখনই কেনাকাটা নয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, জেনারেল ডায়নামিকসের তৈরি স্ট্রাইকার যুদ্ধযান এবং রেথিয়ন ও লকহিড মার্টিনের তৈরি জ্যাভলিন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আলোচনা শুল্কের কারণে স্থগিত হয়েছে।

ভারতের আরেক কর্মকর্তা বলেন, লিখিতভাবে কেনাকাটা স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই দুই পক্ষ চাইলে দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলানো যাবে। তবে আপাতত কোনো অগ্রগতি নেই।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আলোচনায় বিরতি দেওয়ার খবর ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’। ক্রয় প্রক্রিয়া বিদ্যমান নিয়ম মেনেই চলছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছে ভারত। দিল্লি বলছে, তাদের অন্যায়ভাবে নিশানা করা হচ্ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্ররা নিজেদের স্বার্থে এখনো মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, জেনারেল ডায়নামিকসের তৈরি স্ট্রাইকার যুদ্ধযান এবং রেথিয়ন ও লকহিড মার্টিনের তৈরি জ্যাভলিন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আলোচনা শুল্কের কারণে স্থগিত হয়েছে।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবং ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়াই তাদের প্রধান সরবরাহকারী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা ফ্রান্স, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার দিকে ঝুঁকেছে। এর পেছনে কারণ, রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির সীমাবদ্ধতা ও ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য নিজের অস্ত্রভান্ডারের বেশি ব্যবহার।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অস্ত্র কেনা ও যৌথ উৎপাদনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। রাজনাথ সিং তাঁর সফরের সময় প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার মূল্যের নৌবাহিনীর জন্য ছয়টি বোয়িং পি৮১ নজরদারি বিমান এবং সহায়ক সিস্টেম কেনারও ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন। সেখানে এই কেনাকাটা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তাঁর সফর বাতিল হওয়ায় সেই কেনাকাটা স্থগিত হয়ে গেল।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি স্ট্রাইকার যুদ্ধযান
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি স্ট্রাইকার যুদ্ধযান, ছবি–রয়টার্স

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক

চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নিরাপত্তা সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবং ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়াই তাদের প্রধান সরবরাহকারী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা ফ্রান্স, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার দিকে ঝুঁকেছে। এর পেছনে কারণ, রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির সীমাবদ্ধতা ও ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য নিজের অস্ত্রভান্ডারের বেশি ব্যবহার। এ ছাড়া রাশিয়ার কিছু অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে খারাপ পারফরম্যান্স করেছে বলেও পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন।

ভারতীয় এক কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও যৌথ সামরিক মহড়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নির্বিঘ্নে চলছে।

দুই ভারতীয় সূত্র বলেছে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতেও রাজি, যদি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে একই দামে তেল পাওয়া যায়। তবে ট্রাম্পের হুমকি ও দেশে বাড়তে থাকা মার্কিনবিরোধী জাতীয়তাবাদ রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে মোদির ঝুঁকির সিদ্ধান্ত নেওয়াটাকে রাজনৈতিকভাবে কঠিন করে তুলেছে।

রাশিয়ার তেলের ছাড়ও ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের অবনতিটা হঠাৎ হলেও আগে থেকেই কিছুটা টানাপোড়েন ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মে মাসে চার দিনের সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্প ভূমিকা রেখেছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু দিল্লি বারবার ট্রাম্পের সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। সেই সংঘর্ষের কয়েক সপ্তাহ পর ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান।

কয়েক মাস ধরে মস্কো ভারতের কাছে নতুন প্রযুক্তি—যেমন এস–৫০০ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছে। তবে দুই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত এখন রাশিয়া থেকে নতুন অস্ত্র কেনার প্রয়োজন দেখছে না। কিন্তু কয়েক দশকের পুরোনো সম্পর্কের কারণে রাশিয়ার ওপর অস্ত্রনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব নয়। কারণ, ভারতীয় সামরিক সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণে এখনো মস্কোর সহায়তা প্রয়োজন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.