মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ

0
88
আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে কিল–ঘুষি মারছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা। গতকাল বেলা সোয়া তিনটায় বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেনের (হিরো আলম) ওপর হামলার বিষয়টি এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে উঠেছে।

গতকাল সোমবার ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন হয়। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে বনানীর একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে হিরো আলমকে মারধর করেন নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী কিছু যুবক। মারধরের পর হিরো আলমকে ধাওয়া দিয়ে এলাকাছাড়া করেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলের আশপাশে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত থাকলেও তাঁরা ছিলেন ‘দর্শকের’ ভূমিকায়। উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। এই উপনির্বাচনে ভোট পড়ার হার ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আটজন প্রার্থী। বিএনপি এই উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরছবি: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নকারী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া তাঁর বাংলাদেশ সফর শেষে ফেরার পরই দেশটির সরকার বিরোধীদের ওপর হামলার পুরোনো ধারায় ফিরেছে। গতকাল বাংলাদেশে একটি উপনির্বাচন হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল এই উপনির্বাচন বয়কট করেছে। এই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র এক প্রার্থী (হিরো আলম) হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি এখন হাসপাতালে। উপনির্বাচনে ১০ শতাংশ ভোটও পড়েনি। এ অবস্থায় কীভাবে বিশ্বাস করবেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন? কারণ, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। এমনকি এই উপনির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। এই উপনির্বাচনেও প্রার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার, ছবি: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমি বলব, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার যেকোনো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছভাবে ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে উৎসাহিত করি। এবং যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে বলি।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি যেটা বলব, যেমনটা আগেও আমরা বলেছি, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আমরা আশা করব। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাব।’

একই প্রশ্নকারী মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গত বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সফররত এক সংসদ সদস্যের (শামীম ওসমান) সামনে বিক্ষোভ দেখান এক বিরোধী কর্মী। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় এই বিরোধী কর্মীর বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনাটি ফেসবুক লাইভে প্রচার করেন। লাইভে বলা হয়, দেশের বাইরে যাঁরা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁদের বাড়িতে হামলা করে জবাব দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং, কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রে বসে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে কথা বলে, প্রতিবাদ করে, তাহলে দেশে তাঁর পরিবারের নিরাপদ নয়। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়।

প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, তিনি আবার আগের কথার পুনরাবৃত্তি করে বলবেন, যে ধরনের হামলার কথা বলা হলো, গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তার কোনো স্থান নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.