মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে খেয়াং নারীকে হত্যা: পুলিশ

0
15
এ ঘটনায় আজ দুপুরে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়

বান্দরবানের থানচিতে গতকাল সোমবার উদ্ধার হওয়া খেয়াং নারীকে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। থানচি থানার ওসি আজ মঙ্গলবার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ এখনো উদ্‌ঘাটন করা যায়নি। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন মজুমদার আজ সকালে মুঠোফোনে বলেছেন, ওই খেয়াং নারীর মাথায় আঘাত রয়েছে। তাঁকে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনা নিয়ে আজ বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিকদের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ময়নাতদন্তের আগে শারীরিক নির্যাতনের ব্যাপারে বলা যাচ্ছে না। এ সময় জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শহিদুল্লাহ কাওছার এ ঘটনার নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কারা কী কারণে খেয়াং নারীকে হত্যা করেছে, এখনো জানা যায়নি। তদন্তের পর জানা যাবে। এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ এফ এম হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম ও জিনিয়া চাকমা।

বান্দরবানের থানচিতে খেয়াং নারীকে হত্যার ঘটনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার
বান্দরবানের থানচিতে খেয়াং নারীকে হত্যার ঘটনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, ছবি: মংহাইসিং মারমা

থানচি উপজেলা সদর থেকে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ওই নারী খেয়াংপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাঁর তিন সন্তান রয়েছে। ঘটনার দিন সকালে তিনি জুমখেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বিকেলে একটি নালার মধ্য থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে দুর্গম ওই এলাকা থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে।

পাড়াবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঘটনার আগের দিন রোববার ওই নারীকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তি উত্ত্যক্ত করেছিল। তখন তিনি বাড়িতে এসে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এর সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডের ধারণা থাকতে পারে বলে পাড়াবাসী মনে করছেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর স্বামীর বড় ভাই জানিয়েছেন, গতকাল বিকেলে নিখোঁজ ভাইয়ের স্ত্রীকে খুঁজতে জুমখেতে যান তাঁরা। খোঁজাখুঁজি করার সময় তাঁরা দেখতে পান, জুমে বপন করতে নিয়ে যাওয়া বীজ ধান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। থুরুং (বেতের ঝুড়ি), পানির বোতল ও পোশাকের অংশবিশেষও পাওয়া গেছে। জুমখেত সংলগ্ন বনে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার চিহ্ন অনুসরণ করে লাশের সন্ধান পান তাঁরা।

খেয়াং নারী হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ। আজ সকালে শহরের আদালত পাড়ায়
খেয়াং নারী হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ। আজ সকালে শহরের আদালত পাড়ায়

তিন জেলায় বিক্ষোভ

থানচিতে খেয়াং নারীকে হত্যার ঘটনায় বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে আজ দুপুরে এ ঘটনায় দুর্বার নারী নেটওয়ার্ক, সুজন, উইমেন্স রিসোর্স সেন্টার, উইমেন্স অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম ও আদিবাসী ছাত্র সমাজের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। এর আগে জেলা শহরের রাজার মাঠে কয়েক শ তরুণ-তরুণী জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশে মিলিত হন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অং চ মং মারমা, উন্নয়নকর্মী লেলুং খুমি, দুর্বার নেটওয়ার্কের ডনাইপ্রু নেলী, উইমেন্স রিসোর্সের উলিচং মারমা, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি বিটন তঞ্চঙ্গ্যা, মানবাধিকারকর্মী জন ত্রিপুরা, জেমস বম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পাহাড়ি নারীদের ওপর নির্যাতনের কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। হত্যাকারী ও ধর্ষকেরা শাস্তি পায়নি। এ জন্য এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে। তাঁরা অবিলম্বে খেয়াং নারীর হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

খাগড়াছড়িতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আজ দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি আদালত সড়ক হয়ে শাপলা চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, এর আগে ১৮ এপ্রিল এক মারমা তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। এক মাসের ব্যবধানে বান্দরবানের দুর্গম থানচিতে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তাঁরা।

রাঙামাটি কলেজে বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। আজ সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে
রাঙামাটি কলেজে বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। আজ সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে

সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থী কবিতা চাকমা বলেন, ‘আমরা এক মাস আগে কাউখালীতে এক মারমা তরুণীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছিলাম। আজ খেয়াং নারীর জন্য বিক্ষোভ করছি। দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। ওই নারী গিয়েছিলেন জুম চাষের জন্য, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে।

সমাবেশে আকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্ব বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যনু মারমা, মনোতোষ ত্রিপুরা, ত্রিপিটক চাকমা, সুভাষ চাকমা, খঞ্জন ত্রিপুরা, কৃপায়ণ ত্রিপুরা প্রমুখ।

আজ সকালে রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি কলেজ শাখার উদ্যোগে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা দ্রুত খেয়াং নারীর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শহরের শিল্পকলা একাডেমির সামনে এ ঘটনার বিচার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। মানববন্ধন চলাকালে রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুজন চাকমার সভাপতিত্বে সংহতি বক্তব্যে দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার সহসভাপতি কবিতা চাকমা, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ক্যচিংনু মারমা প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.