আবারও গোলাগুলি, মর্টার শেলের বিস্ফোরণে এপারে ভূকম্পন

0
58
নাফ নদীর পূর্ব পাশে মিয়ানমার সীমান্ত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে তিন দিন গোলাগুলি বন্ধ থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে আবার গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গোলাগুলির তীব্রতা বেড়েছে। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত কেঁপে উঠছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও টেকনাফ পৌরসভার বিপরীতে নাফ নদের ওপারে রাখাইনের কুমিরখালী, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, বলিবাজার, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রু গ্রামে একাধিক সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধার নিয়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। ওপারের গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এপারের (টেকনাফ) বাসিন্দারা শুনতে পাচ্ছেন। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারে ভূকম্পন সৃষ্টি হচ্ছে।

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে রাখাইনের মংডু শহরের পাশে বলিবাজার, পেরাংপ্রুসহ কয়েকটি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে আজ বিকেল চারটা পর্যন্ত। মর্টার শেলের বিকট শব্দে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অনেকে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ জালাল বলেন, তাঁর এলাকার মানুষও রাতভর গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে নাফ নদের তোতারদিয়া দুই সপ্তাহ আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এখন সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রাখাইনের বলিবাজার, নাকপুরা ও কুমিরখালী, পেরাংপ্রুতে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক সীমান্তচৌকি আছে। মংডু শহরের আশপাশে কাওয়ারবিল বিজিপি হেডকোয়ার্টারের আওতাধীন ১ ও ৫ নম্বর সেক্টর। এক মাসের চলমান যুদ্ধে আরাকান আর্মি নাইক্ষ্যংছড়ির বিপরীতে রাখাইন রাজ্যে তুমব্রু রাইট ও লেফটে অবস্থিত তিনটি চৌকি দখলে নেয়। অন্যদিকে মংডুর দক্ষিণে রাচিডং ও বুচিডং এলাকার কয়েকটি চৌকি দখলের খবর পাওয়া গেছে। এখন মধ্যভাগে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া আরাকান আর্মি।

হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, তিন দিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় এপারের লোকজনের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, মর্টার শেলের বিস্ফোরণে ভূকম্পন হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, নতুন করে কিছু এলাকায় গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও রাতের গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মানুষ আতঙ্কে আছে। লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি-উখিয়া সীমান্ত শান্ত
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের মানুষ গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি। ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, এখন যেখানে যুদ্ধ চলছে, তা ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এ জন্য গোলাগুলির শব্দ এপারে আসছে না। ঘুমধুম সীমান্তঘেঁষা পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে। সীমান্ত পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় টানা ২৩ দিন বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ছিল।

উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আরাকান আর্মি মংডু শহরের তিন দিক ঘিরে রেখেছে। এখন তারা মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীও অবস্থান ধরে রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। রাখাইন থেকে গুলি এসে পড়ার ভয়ে পালংখালীর হাজারো মানুষ সীমান্তঘেঁষা চিংড়ি ও কাঁকড়াঘেরে যেতে পারছেন না।

রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে বিজিবি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.