যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে ৩৩ মিনিটে আঘাত হানতে সক্ষম উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র

0
133
কিছুদিন ধরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া, ফাইল ছবি: রয়টার্স

তাং ও তাঁর দলের এই গবেষণালব্ধ পর্যবেক্ষণ চীনা ভাষায় প্রকাশিত সাময়িকী মডার্ন ডিফেন্স টেকনোলজিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার মধ্যাঞ্চলের সানচন শহরের উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ছোড়া একটি হুয়াসং-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের কলাম্বিয়া।

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা পরিদর্শন করছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ১৭ মার্চ ছবিটি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা পরিদর্শন করছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ১৭ মার্চ ছবিটি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে
ছবি: এএফপি

চীনা পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের ২০ সেকেন্ডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সংকেত পেয়ে যায়। এর ঠিক ১১ মিনিটের মাথায় আলাস্কার ফোর্ট গ্রিলি থেকে একঝাঁক প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে যায়। যদি কোনো কারণে এসব ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হতো, তাহলে ক্যালিফোর্নিয়ার ভানদেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে আরেক ঝাঁক প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে যেত।

তবে উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্রটির ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

কৌশল বদলাচ্ছে চীন

দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাত্মক প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়ন করে আসছে চীন। দেশটির সম্ভাব্য যুদ্ধভীতি ছিল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও এর আশপাশের এলাকা ঘিরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের এমন কৌশলে পরিবর্তন এসেছে অনেকটা। এমনকি যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে হামলায় সক্ষম রণকৌশল নিয়ে ভাবছেন চীনা কৌশলবিদেরা। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান প্রণালি ও কোরিয়া উপদ্বীপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় চীন এভাবে ভাবছে।

গত জানুয়ারিতে চীনা সামরিক গোয়েন্দাদের একটি প্রতিবেদনে সম্ভাব্য হাইপারসনিক অস্ত্রের হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়। চীনের উহানের এয়ার ফোর্স আর্লি ওয়ার্নিং একাডেমির গোয়েন্দা বিভাগের গবেষক ইউ জিনতাও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে যদি চীন হামলা চালাতে চায়, তাহলে সবচেয়ে কার্যকরী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউবা কাউন্টির ব্যালে বিমানঘাঁটি আর কেপ কড উপদ্বীপ।

উত্তর কোরিয়ায় একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র পরিদর্শনে বাবা কিম জং-উনের সঙ্গে মেয়ে কিম জু-আয়ে

উত্তর কোরিয়ায় একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র পরিদর্শনে বাবা কিম জং-উনের সঙ্গে মেয়ে কিম জু-আয়ে
ফাইল ছবি: এএফপি

তাং ও তাঁর দলের এই পর্যবেক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেশটিকে কতটা সুরক্ষা দিতে পারে, তা যাচাই করা। তাঁদের মতে, হুয়াসং-১৫-এর মতো প্রচলিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে এটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম, তবে পুরোপুরি নিখুঁত নয়।

আরও আগ্রাসী পিয়ংইয়ং

তাং ও তাঁর দলের মতে, আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটতে পারে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর থার্ড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনের তীব্র বিরোধিতা করেছে বেইজিং ও পিয়ংইয়ং।

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং-উনের বোন ও তাঁর সম্ভাব্য রাজনৈতিক উত্তরসূরি কিম ইয়ো-জং গত সপ্তাহে বলেন, উত্তর কোরিয়া আত্মরক্ষায় মনোযোগ দেবে। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে তাঁর এমন মন্তব্যের পরও একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিম ইয়ো-জং আরও বলেন, মার্কিন শীর্ষ কমান্ডাররা বারবার বলেছেন, পিয়ংইয়ং প্রশান্ত মহাসাগর ও আশপাশের এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালে তা ভূপাতিত করা হবে। কিন্তু মার্কিন নিয়ন্ত্রিত নয় এমন এলাকায় উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই ধরনের সামরিক বাধা বা হুমকিকে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.