স্ত্রীর লাশ শৌচাগারে রেখে থানায় গিয়ে নিখোঁজের জিডি করেন স্বামী

0
141
স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে হত্যার এক সপ্তাহ পর স্বামী আলী হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের দেওয়ানবাটি গ্রামে

প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে উঠেছিলেন ফিরোজা বেগম। এরপর আর বিয়ে না করে ১৭ বছর কাটিয়ে দেন। কিন্তু একদিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়ে পরিচয় হয় মো. আলী হোসেন মোল্লার সঙ্গে। এর দুই দিন পরই পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন তাঁরা।

এরপর দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন ফিরোজা। সেই স্বামীই ফিরোজাকে শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে অচেতন করে হত্যা করেছেন। এরপর স্ত্রীর লাশ ফেলে দেন বাড়ির শৌচাগারের রিংয়ের ভেতরে। ওপরে চালের বস্তা দিয়ে ঢেকে আটকে দেন স্ল্যাব।

কেউ যেন কিছু টের না পান, এ জন্য ওই বাড়িতেই থাকছিলেন আলী হোসেন। করছিলেন স্বাভাবিক চলাফেরা। হত্যার চার দিনের মাথায় ‘স্ত্রী নিখোঁজ’ উল্লেখ করে থানায় জিডিও করেন। তবে এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার এক সপ্তাহ পর শনিবার দুপুরে ফিরোজাকে হত্যার বিষয়টি টের পেয়ে মো. আলী হোসেন মোল্লাকে (৩৭) আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্বজন ও স্থানীয় লোকজন। এরপর শনিবার বিকেলে পুলিশ ওই বাড়ির শৌচাগার থেকে ফিরোজা বেগমের লাশ উদ্ধার করেছে। আটক আলী হোসেন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের দেওয়ানবাটি গ্রামের ঘটনা এটি। ফিরোজা বেগম ওরফে রুমা (৩৯) ওই গ্রামের গফুর মোল্লা ওরফে সুইটের মেয়ে।

আলী হোসেন বাড়ি বাগেরহাট শহরের নাগেরবাজার এলাকার আজিজ মোল্লার ছেলে। গ্যাসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আলী নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। থানার কাছেই একটি দোকানে বসতেন তিনি। বছর দেড়েক আগে ফিরোজাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে দেওয়ানবাটি গ্রামে ফিরোজার বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। এই ঘরে তাঁদের কোনো সন্তান নেই।

বিয়ের পর থেকে আলী হোসেন আমার মাকে মারধর করত। আলী হোসেনকে মা দুটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিল। আলী হোসেন মায়ের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। মৃত্যুর আগে অনেকবার মাকে মেরেছে। একবার প্লাস দিয়ে মায়ের দাঁত তুলে ফেলেছিল। কয়েকবার ছুরি দিয়ে আমার মাকে জবাই করতে চেয়েছে।

পূর্ণিমা, ফিরোজা বেগমের মেয়ে

ফিরোজার পরিবারের দাবি, আলী হয়তো একা ফিরোজাকে মারতে পারেননি। তাঁর স্বাস্থ্য যেমন, তাতে তাঁর পক্ষে একা খুন করে শৌচাগারের ভেতরে ফেলা সম্ভব নয়। এই হত্যার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও কেউ জড়িত আছেন।

ফিরোজার চাচা বারিক মোল্লা বলেন, ‘আগের স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ফিরোজার সঙ্গে মাত্র দুই দিনের পরিচয়ের সূত্রে আলী হোসেনের বিয়ে হয়। তারা নিজেরা নিজেরা বিয়ে করে। পরে জানতে পারি, ফিরোজা আলী হোসেনের তৃতীয় স্ত্রী। বিয়ের পর থেকে আলী খুব বেপরোয়া ছিল। মাঝেমধ্যেই ফিরোজাকে মারধর করত। ফিরোজার প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে পিরোজপুরে থাকে।’

ফিরোজার বাবার বরাতে বারিক মোল্লা বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলী বাড়ি এসে বলে, “আপনাদের মেয়ে চলে গেল।” আমরা এসে দেখি, রাস্তায় কেউ নেই। আলীর কাছে জানতে চাইলে বলে, “অনেক দূর চলে গেছে, এখন পাবেন না। পরে আসবে হয়তো।” এর পর থেকে আর ফিরোজাকে পাইনি। হয়তো ওই দিনই ফিরোজাকে মেরে শৌচাগারের মধ্যে রেখে দেয় আলী।’

ফিরোজার জামাতা মো. রায়হান ব্যাপারী বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমার স্ত্রী ফোন করে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারছিল না। এর মধ্যে চার দিন আগে আলী হোসেন ফোনে করে জানায়, আমার শাশুড়িকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আসতে চাইলে বলে, “আসার দরকার নেই। কোথায় জানি গেছে, পাওয়া যাবে।” একপর্যায়ে (আজ) শনিবার পিরোজপুর থেকে আমরা দেওয়ানবাটি গ্রামে আসি। এখানে এসে মায়ের ঘরে ঢুকতেই দেখি, শৌচাগারের চারপাশে নতুন মাটি এবং একটা উৎকট গন্ধ। তখন কী হয়েছে, প্রশ্ন করতেই দ্রুত বেরিয়ে পালাতে চেষ্টা করে আলী হোসেন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় আমরা তাকে ধরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। পুলিশ এসে তাকে আটক করে।’

ফিরোজা বেগমের একমাত্র মেয়ে পূর্ণিমা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আলী হোসেন আমার মাকে মারধর করত। আলী হোসেনকে মা দুটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিল। আলী হোসেন মায়ের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। মৃত্যুর আগে অনেকবার মাকে মেরেছে। একবার প্লাস দিয়ে মায়ের দাঁত তুলে ফেলেছিল। কয়েকবার ছুরি দিয়ে আমার মাকে জবাই করতে চেয়েছে।’

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা আলীকে আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’ ওসি আরও বলেন, হত্যার মূল কারণ ও হত্যার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.