সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মস্থলে যোগ দিয়ে সংস্কৃতি অঙ্গনে পরিবর্তন আনতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কী কী পরিকল্পনা রয়েছে, তা জানিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আজ সোমবার মন্ত্রণালয়ে এসব পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফারুকী বলেন, ‘এখানে লুকানোর কিছু নেই যে আমরা সবাই জানি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি অবহেলিত মন্ত্রণালয়। এখানে বাজেট কম থাকে। কিন্তু আমার অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে, আমি একটা ব্রিলিয়ান্ট টিম পাচ্ছি।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এসব ইনস্টিটিউটের কথা উল্লেখ করে ফারুকী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে আছেন মোহাম্মদ আজম, হি ইজ ব্র্যান্ড! আমি তাঁর কাজ সম্পর্কে জানি। নজরুল ইনস্টিটিউটে আছেন শিবলী ভাই (লতিফুল ইসলাম শিবলী)। তিনি আমাদের ছোটবেলার হিরো ছিলেন। তাঁর গান ছিল সবার প্রিয়। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে আমরা পেয়েছি সৈয়দ জামিল আহমেদকে। আমি সব সময় বলি যে বাংলাদেশের থিয়েটারচর্চার ইতিহাসে জামিল আহমেদ এক পাল্লায়, বাকি সবাই এক পাল্লায়! বাকিরা ছোট বোধ করবেন না, কারণ জামিল আহমেদ আসলেই অনেক বড়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে আছেন আফসানা আপা, তিনিও গ্রেট রাইটার! সুতরাং আমার শক্তির জায়গাটা হচ্ছে, এমন একটি গ্রেট টিম আমার সঙ্গে আছে।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ফারুকী বলেন, ‘প্রথমে আমি আমার মন্ত্রণালয়ের সবার সঙ্গে বসে সত্যিকারের অবস্থাটা জানতে চাইব যে তহবিলের (ফান্ডিং) অবস্থাটা কী। এই তহবিলের মধ্যে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হয় বেতনে, আর কী পরিমাণ খরচ হয় উন্নয়ন প্রকল্পে, কী পরিমাণ প্রশিক্ষণে—এগুলো জানার চেষ্টা করব। এরপর মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে একাডেমিগুলো হেড করছেন, তাঁদের নিয়ে বসব। সেই মিটিংগুলোতে আমি চেষ্টা করব, গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্টেকহোল্ডারদের রাখতে। সবার কাছে পরিকল্পনা চাইব। বলব, আপনারা আমাদের পরিকল্পনা দিন। তিন মাসে দৃশ্যযোগ্য কী পরিবর্তন আনতে পারি আমরা! এরপর আরেকটা পরিকল্পনা দেব, আগামী এক বছরে কী দৃশ্যযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারি আমরা! কী কী প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি। যে পরিবর্তনগুলো আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনে একটা বড় প্রভাব ফেলবে!’
এক বছর মেয়াদি প্রকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ফারুকী আরও বলেন, ‘এক বছর মেয়াদি যে পরিকল্পনাগুলো আমরা করব, সেখানে আমাদের স্বপ্ন থাকবে অনেক। ফলে আমরা দেখব, কিছু বাজেটে কুলাচ্ছে, কিছু কুলাচ্ছে না। এখানে যোগ দেওয়ার আগেই আমি প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে বলেছি। এই পরিকল্পনাগুলো ওনার কাছে পেশ করব, করার পর যদি উনি মনে করেন যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, প্রয়োজন আছে—তাহলে নিশ্চয় সেগুলো বাস্তবায়ন করাও সম্ভব। উনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, আমি ওনাকে বিশ্বাস করি, হি ইজ আ ড্রিমার। তিনি বলেছেন, পরিকল্পনা দেখার পর উনি আমার সঙ্গে বসবেন এবং ওনার সিদ্ধান্তগুলো আমাকে জানাবেন। আমার বিশ্বাস, আমরা ওনার কাছ থেকে পুরোপুরি সাপোর্ট পাব।’
কথা প্রসঙ্গে সিনেমা নিয়েও কথা বলেন সংস্কৃতির নতুন এই উপদেষ্টা। ফারুকী বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশের যে ন্যারেটিভ আমরা নির্মাণ করতে চাই, সেটা ফিল্ম ছাড়া সম্ভব নয়। যদিও ফিল্ম না ঘরকা, না ঘাটকা অবস্থায় আছে। কিন্তু আমি মনে করি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ফিল্মের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ, ফিল্ম হচ্ছে কালচারাল ন্যারেটিভ নির্মাণের অন্যতম টুলস।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শপথ নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে ফারুকী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, ‘আমি কখনোই কোনো পদ কিংবা কোনো চেয়ারে বসব, এটা ভাবি নাই। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা টেম্পটিং, না বলাটা মুশকিল।’