মধ্যরাতে ঢাবিতে উত্তেজনা: ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে আল্টিমেটাম

0
7
মধ্যরাতে ঢাবিতে উত্তেজনা
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নিয়ে আলোচনায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
 
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাত পৌনে একটার দিকে ভিসি চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
 
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হলপাড়া খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে ভিসি চত্বরে গিয়ে সমাপ্ত হয়। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও যোগ দেন।
 
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদল যদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে যায় তাহলে আমরাও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে যাব। ডাকসু, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অন্যতম প্লাটফর্ম। যে ছাত্রসংগঠন ডাকসুর বিরোধিতা করবে আমরা তার বিরোধিতা করবো। আমরা পুনরায় গেস্টরুম-গণরুম চাই না। অবিলম্বে ডাকসু চাই।
 
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ডাকসু যারা চায় না, শিক্ষার্থীদের শত্রু তারা’, ‘এক দুই তিন চার, ডাকসু আমার অধিকার’, ‘দিতে হবে দিতে হবে, ডাকসু দিতে হবে’, ‘লেজুড়বৃত্তির ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ডাকসু আমার অধিকার, বাধা দেয় সাধ্য কার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
 
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক ডাকসুর যারা বিরোধিতা করেন, তাঁদের জায়গা এই ক্যাম্পাসে হবে না।
 
অবিলম্বে ডাকসুর রোড ম্যাপ চাই মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমীদ আল মুদ্দাসির বলেন, ২০১৯ সালে ডাকসু হওয়াতে শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে হলেও গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছিলো। এখন স্বাধীন বাংলাদেশ একদল ডাকসুর বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। এখানে ছাত্রলীগের মতো দানবের কবর রচিত রয়েছে, যদি ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করে তাহলে তাদেরও কবর রচিত হবে। ছাত্রদলকে বলবো আপনারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে রাজনীতি করেন। ডাকসু বাস্তবায়নে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
সহ-সমন্বয়ক মোসাদ্দেক ইবনে আলী মোহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কোনো একক ব্যক্তি নয়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। যারা যারা ভিসিকে হেনস্তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের রোড ম্যাপ দিতে হবে।
 
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে জানিয়ে সহ-সমন্বয়ক এবি জুবায়ের বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় আমরা আওয়ামী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলাম। ছাত্রদলের ভাইয়েরাও আওয়ামী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কিন্তু যখনই আমরা বলললাম ডাকসু চাই পেছনে দেখি ভাইরা নাই। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে কোনো দানব দেখতে চায় না। অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুস্থ নিরাপদ রাজনীতি চর্চার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে।
 
ডাকসু শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি দেওয়া নিয়ে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মত কোন প্লাটফর্ম নাই। কিন্তু শিক্ষকদের এবং কর্মচারীদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলার জন্য প্ল্যাটফর্ম আছে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের চাওয়া পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাণের দাবি ডাকসুর জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছে।
 
বক্তব্যের শুরুতে বৃহস্পতিবারের সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রদল কর্তৃক হেনস্তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, উপাচার্যকে অপমান করার মাধ্যমে ছাত্রদল পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অপমান করেছে।
 
ডাকসুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ (রূপরেখা) ঘোষণা করতে হবে। আমরা শিক্ষার্থী নির্যাতনের আর পুনরাবৃত্তি চাই না।
 
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিন্ডিকেট সভায় আওয়ামীপন্থিদের ডাকা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদ করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় হট্টগোল হয়।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে শুরুতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। একদিকে শিক্ষার্থীরা ডাকসু চেয়ে স্লোগান দেয় অন্যদিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এখনই ডাকসুর বিষয়ে আলোচনা না করার দাবি তোলেন।
 
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে আলোচনা না করার এবং দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন এবং উপাচার্যের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
 
মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবিদুর রহমান মিশু উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এখনো রাজনীতি শুরুই করতে পারেনি। অস্থিতিশীল এক পরিবেশে বিভিন্নজন বিভিন্ন ব্যানারে রাজনীতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষের চাপের মুখে অনির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্যদের সভায় এখনই ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এ সময় তারা হলে হলে মনিটরিং কমিটি এবং ক্যাম্পাস পেট্রোল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
 
এ সময় ভিসি নিয়াজ আহমদ খান বলেন, সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডাতে ডাকসু সংক্রান্ত কিছু নেই। ডাকসুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবার ঐক্যমত না হলেও বৃহত্তর অংশের সমর্থন নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।
 
এ সময় একদিকে ছাত্রদল নেতারা দ্রুত ডাকসুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন অন্যদিকে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দ্রুত ডাকসু চেয়ে স্লোগান দেন।
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.