২০০৯ সালের পর টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সংসদে দলটির এখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ২০০৯ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সংসদ উপনেতার পদে আসীন ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ মারা যান। এর পর থেকেই সংসদ উপনেতার পদটি ফাঁকা রয়েছে।
সংসদে উপনেতার পদটি পূরণ করার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কাউকে উপনেতা করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে মন্ত্রী পদমর্যাদার এ পদে বরাবরই জ্যেষ্ঠ কোনো নেতাকে বসিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এবার সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ার পরই মতিয়া চৌধুরীর এ পদে আসার বিষয়টি দলে আলোচিত হয়। কিন্তু সংসদের গত অধিবেশনে আলোচনা থাকার পরও এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মতিয়া চৌধুরী পাঁচবারের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সরকারে তিনি তিনবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য নন।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আছেন মতিয়া চৌধুরী। দলটি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তাঁকে রাজপথে আন্দোলন-কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। রাজপথের লড়াই-সংগ্রামের কারণে তিনি ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পান। সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত মতিয়া চৌধুরীর ছাত্রজীবন থেকে এখনো রাজনীতিই আঁকড়ে আছেন।
সংসদের ২১তম অধিবেশন শুরু হয়েছে গত ৫ জানুয়ারি। এর আগে সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ার পর ৩০ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর ২০তম অধিবেশন বসে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, ২০তম অধিবেশনেই মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত ছিল। শেষ মুহূর্তে আর তা হয়নি। দলের জ্যেষ্ঠ আরেকজন নেতা সংসদের উপনেতা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে তা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কানেও পৌঁছান। এরপরই মতিয়া চৌধুরীকে ওই অধিবেশনেই উপনেতা করার সিদ্ধান্তটি আর এগোয়নি।
আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা ও একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সংসদের উপনেতা হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকেই বেছে নেবেন—এটি ঘনিষ্ঠদের আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু একজন জ্যেষ্ঠ নেতার মনোভাব জানার পর তিনি কিছুটা সময় নেন। এবারের অধিবেশনে মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কর্মসূচিতে বেশ মমতায় ও শ্রদ্ধায় মতিয়া চৌধুরীকে কাছে টানেন। সর্বশেষ মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর ট্রেনে চড়ার সময় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে পাশে বসিয়েছিলেন। পরে মতিয়া চৌধুরী আসার পর মেট্রোরেলে তাঁকে পাশে নিয়ে বসান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি মতিয়া চৌধুরীর প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা দলের নেতাদের কাছেও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ থেকে অনেকে মতিয়া চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি কিংবা সংসদের উপনেতা হিসেবে বিবেচনা করছিলেন।
সংসদ উপনেতার পদে সংসদের ভোটাভুটির প্রয়োজন হয় না। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী তাঁর অভিপ্রায়ের কথা স্পিকারের কাছে প্রকাশ করেন। এরপর স্পিকার সেটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠান। প্রজ্ঞাপন হলে সংসদ উপনেতার শপথ নিতে হয় না। তবে সংসদ উপনেতা মন্ত্রীর মর্যাদা ও সুবিধা উপভোগ করেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, আজ রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে টুকটাক আলোচনাও হতে পারে। এরপর স্পিকারের কাছে সংসদ নেতার অভিপ্রায় অনুসারে মতিয়া চৌধুরীর নাম উপনেতা হিসেবে প্রস্তাব করা হবে। দু-এক দিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনে সংসদ উপনেতার পদ পূরণ করা হতে পারে। আজকের বৈঠকে বিষয়টি আসতে পারে বলে তিনি জানান।