মতিউরের স্ত্রী লাকিও বিপুল সম্পদের মালিক

0
89
মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির বিলাসবহুল বাড়ি

ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমান। বেরিয়ে আসছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর নানারকম সম্পত্তির তথ্য। এর মধ্যে নরসিংদীর রায়পুর, গাজীপুরসহ নানা স্থানে ড. মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির বিপুল সম্পত্তি নিয়েও চলছে আলোচনা।

লায়লা কানিজ লাকি ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতা পেশা পরিবর্তন করে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নেতা বনে যান। প্রথমে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। পরিচিতি লাভ করেন স্থানীয় এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। স্থানীয়রা বলছেন, ২০২৩ সালে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে প্রভাবশালী স্বামীর অর্থ খাটিয়ে লাকি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদকের পদ নেন। সর্বশেষ নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসন (নরসিংদী গাজীপুর আসন) পেতে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গত ২৯ মে টেলিফোন প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল তাঁর।

রায়পুরায় লায়লা কানিজ লাকির ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট

রায়পুরায় লায়লা কানিজ লাকির ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট

স্থানীয় সূত্র জানায়, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ জমির ওপর লাকির নামে গড়ে তোলা হয়েছে আলিশান ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট। এছাড়া নিজ এলাকায় গড়েছেন দৃষ্টিনন্দন আলিশান বহুতল লাকি কটেজ। বাড়ির পাশে লায়লা কানিজ লাকি সড়কও রয়েছে।

এছাড়া গাজীপুরের পূবাইলে লাকির নামে আপন ভূবন নামে বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পট থেকে শুরু করে রয়েছে বাণিজ্যিক এলাকায় কোটি কোটি টাকার জমি-প্লট। তাছাড়াও নরসিংদী ও ঢাকায় রয়েছে আলিশান বিলাসবহুল বাড়ি। লাকি ও তার সন্তানরা চড়েন দামি ব্রান্ডের গাড়িতে।  সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে জমা দেওয়া হলফনামায় লাকি ২২টি পৃথক পৃথক স্থানে তার সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন।

হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তিনি রাজউকের ৫ কাঠা জমি, সাভারে ৮.৫ কাটা জমি, গাজীপুরে ৫ কাঠা, পূবাইলে ৬.৬০ শতাংশ ও ২.৯০ শতাংশ জমি, গাজীপুরের খিলখাও এলাকায় ৫ শতাংশ ও ৩৪.৫৫ শতাংশ জমি, বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ জমি, মেঘডুবীতে ৬.৬০ শতাংশ জমি, নাটোরের সিংড়ায় ১৬৬ শতাংশ জমি দেখিয়েছেন। মরজাল বাসস্ট্যান্ডের পাশে ১৩৩.৫০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্কের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৫৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্কে কমপক্ষে ১৫০ একরের বেশি জমি রয়েছে। এসব জমির বেশিভাগই কমদাম দিয়ে দখল করা বলে দাবি স্থানীয়দের।

লাকি হলফনামায় রায়পুরে ৫.২৫ শতাংশ জমিতে নিজের বিলাসবহুল একতলা ভবনের মূল্য দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। পাশে একই জমিতে ৮.৭৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন আরেকটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবন, যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এছাড়া নরসিংদী ও গাজীপুরের ৯টি স্থানে ২৭৮.৯৩ শতাংশ জমির উল্লেখ করলেও, তার মূল্য উল্লেখ করেননি।

ব্যাংকে রয়েছে তার ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি রয়েছে বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়া ঢাকায় ঠিকানাবিহীন একটি ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ৫৫ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ টাকা।

প্রসঙ্গত, ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন মুশফিকুর রহমান ইফাত। কোরবানি শেষ হলেও ওই ছাগলকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক থামছে না। সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে ছাগল, ইফাত ও তার বাবাকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে। যদিও তা অস্বীকার করেন মতিউর। ইফাতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই বলেও জানিয়েছিলেন। আর ইফাত দাবি করেছিলেন, তিনি কোনো ছাগল কিনেননি।

তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। ইফাত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার অন্তত সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে এ বছর ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। গত বছরও কিনেছেন ৬০ লাখ টাকার পশু। ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে ছাগল ঘরে না আনা আলোচিত ইফাত পাখি পুষতে পছন্দ করেন। আড়াই লাখ টাকার পাখিও তার ঘরে আছে বলে এক ভিডিওতে ইফাতকে বলতে শোনা গেছে। তাঁর ঘরে মিশরের বাজরিগার পাখি, অস্ট্রেলিয়ার গালা কাকাতুয়াসহ আছে নানা প্রজাতির বেড়ালও।

এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ। কিন্তু ফেসবুকে শুধু একটি ছাগল কেনার ভিডিও ঘুরলেও সমকালের হাতে এসেছে দামি পশু কেনার অর্ধশত ভিডিও এবং ছবি। এসব ভিডিওতে ইফাতকে গরু কিনতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওয়ের সূত্র ধরে ঢাকার আশপাশে ১০টি খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাত এ বছর সাতটি খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। তবে ফেসবুকে বিতর্কের মুখে সাদিক এগ্রো থেকে কেনা ওই ছাগল তিনি আর বাসায় নেননি।

ছাগল কেনার ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই তৈরির পর অনেকে ইফাতের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমন পরিস্থিতিতে ইফাতের বাবা মতিউর রহমানের নাম সামনে আসে। অনেকে তাঁর অঢেল সম্পদের তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের ১২ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হলো কী করে, সেই প্রশ্নও ওঠে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.