‘মতামত জানাও, পুরস্কার জিতে নাও’ ক্যাম্পেইনে বিজয়ীদের পাঠানো লেখা

0
197
বারবার জিপিএ-৫ পেতে চাই

 আমি সিলেটে শিখো ও আয়োজিত জিপিএ-৫–এর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল। তবে খুব দুঃখ পেয়েছি স্যাররা না আসায়। এমনকি আনিসুল হক স্যারও এলেন না। আমি যে ক্রেস্টটা পেয়েছি, তা ভাঙা ছিল। তবে এতে আমার মন খারাপ হয়নি।

অনুরোধ করব, ক্রেস্টগুলো দেখে দেওয়ার জন্য আর অনুষ্ঠানটি বড় জায়গায় করার জন্য। সবশেষে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই শিখো ও , যারা এ রকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

 ‘যা কিছু ভালো তার সাথে  সেটাই একজন অভিভাবক হয়ে দেখে এলাম ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ জিপিএ–৫ প্রাপ্ত, কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। সকাল ৮টায় সাবিহা ও তার দুই বান্ধবী নিয়ে রওনা দিলাম গন্তব্যের দিকে। ফ্যান্টাসি কিংডম গিয়ে এন্ট্রি কার্ড ও খাবার কুপন সংগ্রহ করলাম। সবকিছু এত সুন্দর গোছানো! ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশ করে প্রথমে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্টটা সংগ্রহ করল মেয়ে। সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা ছাত্রীরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে। তারপর রাইডে চড়ার লম্বা লাইন। সম্পূর্ণ জায়গাজুড়ে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি। ওরা যেন মুক্ত স্বাধীন নিজেরাই লাইন ধরছে, রাইডে উঠছে। আমার মেয়ে তো রোলারকোস্টারে ওঠার সাহস করে ফেলল।

দুইটার দিকে কনকর্ড মঞ্চে মাইকের আওয়াজে মেয়ের সঙ্গে আমিও বসে পড়লাম ছাত্রীদের সঙ্গে। নিজেকে এই বয়সে ওদেরই একজন মনে হচ্ছে। আমার মা–মেয়ের দুপুরের মজার খাবার খেলাম। মঞ্চে একে একে এত গুণী মানুষের উপস্থিতি আর এত সুন্দর উপদেশ শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানে বাবা–মায়েদের শিক্ষকদের জন্য হাততালি, তিন ‘ম’–কে না বলা। ‘মাদক’, ‘মিথ্যা’ ও ‘মুখস্থ’–কে না৷ রাশেদা কে চৌধূরীর ‘যারা এখানে উপস্থিত হতে পারেনি, যারা এত ভাগ্যবান না, তাদের সবার জন্য চিন্তা করাই তো পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য’—এত সুন্দর উপদেশ! সম্পাদক মতিউর রহমান মা-বাবার অবদান একজন সন্তানের জীবনে কতটুকু, তা তুলে ধরেছেন। আরিফিন শুভ বলেছে, ‘আজকের সফল চিরকাল সফল থাকব না, ব্যর্থ হলে চিরকাল ব্যর্থ থাকব না। কোনালের গান অসাধারণ ছিল। ঋতুরাজ ও নন্দিতার দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘বাগিচায় বুলবুলি’ অনেক ভালো লেগেছিল। অবন্তী সিঁথি, এরফান মৃধা, চিরকুট—সবার গান উপভোগ করলাম।

আমার এই বয়সে একটুও ক্লান্ত লাগছিল না। আমি আর আমার মেয়ে যেন দুই বান্ধবী। অনেক ভালো লাগার দিন ছিল ৩১ জানুয়ারি। মা-মেয়ে অনেক কিছু দেখলাম, শিখলাম। সামনে এভাবে আরও যাতে সফল হয়, হতে পারে আমার মেয়ে সেই দোয়া করি।  অনেক ধন্যবাদ ব্যক্তিগত অর্জনকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

আমি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী। আর পাঁচটা শিক্ষার্থীর মতো জিপিএ-৫ পাওয়া আমারও স্বপ্ন ছিল। আল্লাহ তাআলার রহমতে আমি আজ অনেক খুশি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে। আমার এই স্বপ্ন পূরণের পেছনে অবদান রয়েছে আমার প্রথম অভিভাবক মা-বাবা, দ্বিতীয় অভিভাবক শিক্ষক ও শিখো। আমি তাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা। আজ তারা না থাকলে হয়তো আমার ও শিখোর মতো এত বড় স্থান থেকে সংবর্ধনা পাওয়া হতো না।

৩১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে যেতে পেরে আমি আসলেই অনেক খুশি। এই অনুষ্ঠানে আগত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের বলা প্রতিটি কথা আমাকে আমার পরবর্তী ধাপে ভালো কিছু করার জন্য উৎসাহিত করবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পারভীন হাসান ম্যাম, রাশেদা কে চৌধূরী ম্যাম, মতিউর রহমান স্যার, আনিসুল হক স্যার, মুনির হাসান স্যার, তানভীর হাসান স্যার, জিসান ভাইয়ার কথায় আমি নতুন আশার আলো দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে জিসান ভাইয়ার বলা ‘এসএসসিতে সবাইকে দেখাই দিছি, এইচএসসিতে ইনশা আল্লাহ দেখাই দিব’। তানভীর স্যারের বলা ‘জীবনে যে পেশায় যাও না কেন, সবকিছুতেই প্রথম হবা, যেখানে দ্বিতীয় হবা সেখানে যাবা না।’ এই কথাগুলোর মাধ্যমে আবারও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি যেমন অনুপ্রেরণা পেয়েছি তেমন ছোট ভাই-বোনেরাও অনুপ্রাণিত হবে। আশা করি, এইচএসসি-২০২৪–এও জিপিএ-৫ পেয়ে আমি আবারও এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারব। আর এভাবেই আমি  ও শিখোকে আমার আগামী দিনগুলোতে পাশে চাই।

এবার এসএসসিতে জিপিএ–৫ পাওয়ায় আমি শিখো ও আয়োজিত জিপিএ–৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করতে পারি। অনুষ্ঠানটি এর আগে শেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও ২০২৩–এ আয়োজিত হলো। সৌভাগ্যক্রমে আমি সেই অনুষ্ঠানের অংশ হতে পারি। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আনন্দময় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য  ও শিখো তাদের চেষ্টায় কোনো কমতি রাখেনি।

অনুষ্ঠানটিতে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর পর মনে হয়েছে যে না আমার কষ্ট করে পড়াশোনা করে এসএসসিতে ভালো ফলাফল করাটা একদম সার্থক। অনুষ্ঠানটি আমাকে একভাবে উপলব্ধি করিয়েছে যে ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’। কেননা, আজ যদি আমি এসএসসির সময়টুকুতে কষ্ট করে পড়াশোনা না করতাম, তাহলে হয়তো এই সুন্দর অনুষ্ঠানটা উপভোগ করতে পারতাম না। আবার পরীক্ষার পর ও পরীক্ষার ফলাফলের পরের সময়টুকু আমি এতটা নিশ্চিন্তভাবে আনন্দ নিয়ে কাটাতে পারতাম না। অনুষ্ঠানটি আমাকে পরবর্তী সময়ে যেন এভাবেই আমার এইচএসসির ফলাফল আমার জন্য আনন্দ নিয়ে আসে, সেই জন্য পড়াশোনা করার প্রতি আমাকে নতুনভাবে উৎসাহিত করেছে। ‘শিখো’র সহপ্রতিষ্ঠাতা জিসান জাকারিয়া ভাইয়া, শিখোর পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক মাশরুর হোসেন ভাইয়া এবং  ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শ্রদ্ধেয় আনিসুল হক স্যারের কথাগুলো আমার জন্য ছিল অনেক উৎসাহ ও প্রেরণাদায়ক।

যেন তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীকে এভাবেই উৎসাহ ও প্রেরণা দিতে পারে, সে জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। আমি চাই, তারা যেন এইচএসসিতেও এভাবেই একটি সংবর্ধনা আয়োজন করে, যাতে আবারও আমার সৌভাগ্য হয় তাদের আয়োজনের অংশ হয়ে আনন্দপূর্ণ কিছু সময় কাটানোর।

 যখন জানতে পারলাম, ৮ বছর পর জিপিএ–৫ আবারও আয়োজিত হতে যাচ্ছে এবং প্রথম ব্যাচটাই আমরা, তখন নিজেদের অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে হলো। সহপাঠীদের সব তথ্য জানিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে অধীর আগ্রহে ছিলাম আমরা সবাই। আমাদের এক্সাইটমেন্ট জানাতে শিখোর অফিশিয়াল পেজে আমি একটা ভিডিও আপলোড করেছিলাম। শিখোর স্বনামধন্য শিক্ষকেরা যথেষ্ট সাপোর্ট আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমায়। তারপর যখন একে একে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি সব জেলায় অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হচ্ছিল আমাদের অপেক্ষার উত্তেজনা বোধ হয় আরও বেড়ে গিয়েছিল। সবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল।

একটা শব্দ আছে ‘কল্পনার অতীত’। এটা বোধ হয় সেদিন আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। ভাবতেও পারিনি এত সুন্দর একটা সময় শিখো ও আমাদের উপহার দেবে। গেমস, মজা, সেলফি, গান, কনসার্ট—এগুলো তো সবাই–ই উপভোগ করেছে। তাদের দেখেই ভালো লাগার মাত্রা বোঝা যাচ্ছিল। এই সবকিছু অনেক অনেক ভালো লাগার পরও কিছু জিনিস অত্যন্ত সুন্দরভাবে আমাকে আকর্ষণ করেছে, সেটা তাদের ডিসিপ্লিন আর ভালোবাসা ও সহযোগী বার্তা।

এত বড় পর্যায়ে মানুষ পৌঁছে যাওয়ার পর অনেকেই বোধ হয় তাঁর থেকে আর ফ্রেন্ডলি আচরণ আশা করতে পারে না। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে আমাদের তা একমুহূর্তের জন্যও মাথায় আসেনি, তাঁদের আদর, স্নেহ আর ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ আজীবন আমাদের উৎসাহিত করবে ইনশা আল্লাহ। দ্বিতীয়ত, আমি অনেককেই দেখেছি কেউ তার মাকে খুঁজে পাচ্ছিল না বা কোনো মা তাঁর সন্তানকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এমনকি যারা ফ্রেন্ড সার্কেলে এসেছিল এমনও কেউ মিসিং ছিল। স্টেজের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কী চমৎকারভাবে ঘোষণা করে ব্যক্তিবিশেষকে তার মা বা বাবা বা বন্ধুদের খুঁজে পেতে সাহায্য করছে।

সবচেয়ে অবাক হয়েছি যখন মুঠোফোনের মতো ডিভাইস হারানোর পরও যখন সবার সহযোগিতায় তার আসল মালিক তা ফিরে পায়। বর্তমানে চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসবাদের ছোঁয়ায় দেশ থাকলেও দেশের নতুন প্রজন্মকে একদম ছুঁতে পারেনি তা। জিপিএ-৫ পেয়ে শিক্ষার্থীরা তার প্রমাণ রেখেছে। আর এই প্রমাণটি পুরো দেশে উপস্থাপন করে শিখো ও  দেখিয়ে দিয়েছে।

ধন্যবাদ বলে ছোট করব না। শুধু একটা বাসনা জানাব ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পরও এই চমৎকার অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকব আমরা ইনশা আল্লাহ।

 আমি আমার যেসব বন্ধুর সঙ্গে শিখোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম, তাদের সবাই আমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব শুরু পঞ্চম শ্রেণি থেকে। আমরা সবাই আদমজী স্কুল থেকে পিইসি, জেএসসি এবং সবশেষে এসএসসি একসঙ্গে দিই। পঞ্চম শ্রেণি থেকে এসএসসির হল পর্যন্ত আমার সঙ্গে তারা ছিল আমার অনুপ্রেরণার খুঁটি হয়ে। আমার প্রতিটা সফলতার মাইলফলক তারা যেমনভাবে আমার সঙ্গে ছিল, ঠিক তেমনিভাবে আমার ব্যর্থতার দিনগুলোতেও তারা অন্ধকারে ছায়ার মতো মিলিয়ে যায়নি। বরং সঙ্গে থেকেছে প্রতিটা সময়। আজ আমাদের সবার কলেজ আলাদা। আজ আমরা বাস্তবতার সেই দরজার সামনে এসে উদীয়মান যে দরজার সামনে আছে আমাদের বিচ্ছেদ। ‘সময় সবকিছু বদলে দেয়’ বড়দের কাছে এ কথাটা অনেক শুনতাম, তবে কথাটার ভার আজ আমাদের কাঁধে এসে ঠেকে গেছে। সেদিন আমাদের সংবর্ধনাই হয়তো আমাদের সাত বছরের বন্ধুত্বের সর্বশেষ সুন্দর মুহূর্ত ছিল, যা আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।

আমার পরিবারের সঙ্গে আমার ছোটবেলার বেশির ভাগ স্মৃতিই এই ফ্যান্টাসি কিংডমে। আগে দুই মাস পরপরই আসা হতো তবে এখন আর সেভাবে আসা হয় না। সেদিন প্রায় ১০ বছর পর ফ্যান্টাসি কিংডমে আমার পদার্পণ। ছেলেবেলার সব আবছা আবছা স্মৃতিকে টুকরা টুকরা জোড়া লাগাতে লাগাতে খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত মনে পড়ে গেল। বাবার সঙ্গে কাটানো সেসব সহজ–সরল সময়, মায়ের চোখে আনন্দের ঝিলিক—সবকিছু আজ স্বপ্নের মতো লাগে।

বন্ধুদের সঙ্গে ফ্যান্টাসি কিংডমের রাইডগুলো চড়ে যে আনন্দের আবরণ ছড়িয়ে গিয়েছিল, তা হয়তো কোনো দিন ভোলা যাবে না। বিকেলের কনসার্টে কাঁধে কাঁধ রেখে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো বিকেলটা সময়কে যেন একমুহূর্তের জন্য থামিয়ে দিয়েছিল। রঙিন টেলিভিশনে দেখা কিছু মানুষের দেখা মিলল বাস্তব স্টেজে। সত্যিই একটি সোনালি দিন কেমন হয়, তা সেদিন জানতে পারলাম।

আমার অতীত ও বর্তমান এভাবে এক সুতায় গেঁথে যাবে, তা কখনো কল্পনাও করিনি, তবে ছেলেবেলার সে ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সোনালি দিনটিকে হয়তো আবার খুঁজে ফিরব ভবিষ্যতের কোনো এক রোদেলা দুপুরে। কাল থেকে কলেজ শুরু হবে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে পড়াশোনা, কোচিং প্রাইভেট আর ঢাকা শহরের জ্যামে আটকে থাকা মানুষের ভিড়ে। সময় চলে যাবে সময়ের অপলক সীমাহীন স্রোতে, আমরা খুঁজে যাব আমাদের সেই সোনালি বিকেলটাকে, যে সোনালি বিকেল সময়কে হার মানিয়েছিল বন্ধুত্বের এক জাদুকরি ছড়ির ছোঁয়ায়।

 প্রথমেই বলতে চাই, এই আয়োজন নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশাল পাওয়া। হাজারো মেহনতের পর কোনো শিক্ষার্থী যখন জিপিএ–৫ পায়, তখন তার মতো সুখী আর কে হতে পারে? সঙ্গে সঙ্গে শিখো-  এ রকম জমজমাট সংবর্ধনা পেলে তো যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। যেখানে অধিকাংশ স্কুল তাদের নিজেদের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিতে সংকোচ বোধ করে, সেখানে শিখো- শুধু শিক্ষার্থীদের মনের প্রশান্তি বাড়ানোর জন্য এত বড় আয়োজন করে আসছে যুগ যুগ ধরে।

যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ রকম আয়োজনের মাধ্যমে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা পেয়ে আসছে। এতে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো ফল করতে পরিশ্রমী হয়ে ওঠে। আর যারা সিনিয়র আছে, তারা এ রকম সংবর্ধনা পাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে। অবশ্যই এটি একটি অনন্যসাধারণ আয়োজন। যারা জিপিএ–৫ পায়নি তারা ভবিষ্যতে ভালো করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে থাকে। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মে এ আয়োজন একটি শিক্ষিত সমাজ গঠন করতে সাহায্য করছে।

আমি নিজেও জিপিএ–৫ পেয়েছি। এ রকম সংবর্ধনা পাব, তা কল্পনায়ও ভাবিনি।  আশা করি, এই রকম সংবর্ধনার আয়োজন তত দিন বজায় থাকবে, যত দিন  থাকবে।

বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচকানাচে মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের পরিশ্রমের ফল পাচ্ছে এ রকম আয়োজনের মাধ্যমে। টাকাপয়সা কিছুদিন পরই শেষ হয়ে যায়। তবে এ রকম ক্রেস্ট আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। তাই সারা দেশের জিপিএ–৫ প্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই, ‘শিখো ও  থাকবে যত দিন, মেধাবী শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা পাবে তত দিন’।

শুরুতেই ধন্যবাদ জানাই ও শিখোকে আমাদের এ রকম একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য। আমরা এমন একটা দিন পেয়ে সত্যিই খুব আনন্দিত। এখানে এসে আমরা একটি সার্টিফিকেট ও ফ্রেশ–এর পক্ষ থেকে কিছু উপহারসামগ্রী পেয়েছি। মাসিক ম্যাগাজিন কিশোর আলো সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। চলতি ঘটনা, বিজ্ঞানচিন্তা পত্রিকাগুলোও আমরা দেখালাম। এগুলো দেখে আমরা অনেক কিছু জানলাম।

স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছিল!

 গেট দিয়ে ঢোকার পরপরই এত মানুষ দেখে প্রথমটাতে বেশ ভয়ই পেয়েছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকের সঙ্গে পরিচিত হলাম, নতুন অনেক বন্ধু বানালাম। নাশতার লাইনে দাঁড়িয়ে আমার পাশের মেয়েটিকে হঠাৎ বেশ পরিচিত মনে হলো। একসময় মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি তানভীর না?’ আমি হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলে সে বলল, ‘আমাকে চেনোনি? আমি সাফা!’ হঠাৎ পুরোনো অনেক স্মৃতি মাথার মধ্যে দিয়ে চলে গেল। সাফা আমার ছোটবেলার বন্ধু। স্কুল আর এলাকার পরিবর্তন হওয়ায় অনেক দিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। বেশ কিছুক্ষণ আমরা দুজনে কিছু বলতে পারলাম না, আর যখন বলা শুরু করলাম সারা দিন আর থামলাম না। পরবর্তী সময়ে সারা দিন একসঙ্গে ছিলাম আমরা। অনেক জমানো কথা বললাম দুজন দুজনকে। সব বন্ধু মিলে বিভিন্ন রাইডে চড়লাম একসঙ্গে দল বেঁধে, পুরোনো অনেক স্মৃতি জেগে উঠল।

দুপুরের খাবার খেয়ে মূল অনুষ্ঠানের ওখানে গেলাম সবাই। অনেক অভিভূত হলাম যখন একদম কাছে থেকে নিজের প্রিয় লেখক আনিসুল হক স্যারকে দেখলাম, স্যারের উপদেশগুলো শুনলাম। ওই মুহূর্তটাকে তো আমার স্বপ্নই মনে হচ্ছিল, যখন আমি স্যারের সঙ্গে সেলফি তুলেছিলাম, স্যার আমাকে তাঁর অটোগ্রাফ দিলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বললাম।

এরপর একে একে এলেন মেহজাবীন আপু, আরিফিন শুভ ভাই, মোস্তফা কামরুল হক, সাবিলা আপু। পছন্দের মানুষগুলোকে এত কাছ থেকে দেখে কী যে খুশি লাগছিল, তা আসলে শব্দে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। আরিফিন শুভ ভাইয়ের ওই কথাটা তো আমাদের সবার জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা যে ‘আমি শুধু ২৭৫ টাকা নিয়ে পালিয়ে এসে আমার ক্যারিয়ার শুরু করি। আমি পারলে তোমরা পারবে না কেন?’ এরপর তিরন্দাজ আর বে অব বেঙ্গল ব্যান্ডের স্টেজ কাঁপানো পারফরম্যান্স দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ হয়।

শুরুটা ভয় দিয়ে হলেও শেষটা অনেক আনন্দের ছিল। ধন্যবাদ শিখো ও আমাদের এত সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য, যেখানে আমরা আমাদের প্রিয় তারকাদের থেকে শুনতে পেরেছি, অনেক নতুন বন্ধু বানাতে পেরেছি, আবার আমার মতো অনেকে পুরোনো বন্ধুকে ফিরে পেয়েছি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.