কয়েক মাস ধরে আলু, পেঁয়াজ, চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তি। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে তৎপর হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডলারের বর্তমান দর বিবেচনায় নিয়ে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করার জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কমিশন এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত না নিলেও ইতোমধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তেলের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে এক সপ্তাহ ধরে ডিলাররা পাইকারি পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৪-৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ট্যারিফ কমিশনকে পাঠানো ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর সংগঠনের চিঠিতে বলা হয়, দেশে ডলারের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে। ভোজ্যতেল আমদানিতে ডলারের বিনিময় মূল্য বর্তমানে ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ যখন ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয় তখন ডলারের বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছিল ১১১ টাকা।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন
এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনা শেষে কোম্পানিগুলোকে নিয়ে কমিশনের বৈঠক হবে। এরপর একটা যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে দুটি ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের দু’জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডলারের দাম কীভাবে বাড়ছে, তা কারও অজানা নয়। পাঁচ-ছয় মাস আগে ডলারের দাম ১০২ টাকা ধরে এলসি খোলা হয়েছে। কিন্তু এখন পেমেন্ট করতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১২২ টাকায়। এতে ২০ টাকার মতো অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মতে ব্যাংকগুলোর ঋণপত্র বা এলসি খোলায় প্রতি মার্কিন ডলারে ১১১ টাকার বেশি নেওয়ার কথা নয়।
ভবিষ্যৎ ডলারের দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ধরুন, এখন ডলারের বিনিময় মূল্য ১২০ টাকা ধরে এলসি খোলা হলো। সেই পণ্য আমদানি করে বিক্রিও করা হলো। কিন্তু যে হারে ডলারের দাম বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ডলারের দর যদি ১৪০ বা ১৫০ টাকা হয়ে যায় তাহলে এই বাড়তি দর পরিশোধ করতে গিয়ে কোম্পানিগুলো খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে।’
আরেকটি ভোজ্যতেল কোম্পানির পরিচালক বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে তেলের দাম বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এ দফায় লিটারে অন্তত ১০ টাকা বাড়ানোর পক্ষে তাদের অবস্থান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করে। তখন খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা করা হয়। পাঁচ লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮২৫ টাকা। এ ছাড়া পাম তেলের দাম ৪ টাকা কমিয়ে লিটারপ্রতি ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সরকারি সংস্থা টেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের লিটারে ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে, যা এতদিন বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। একইভাবে পাঁচ লিটারের বোতল ৮২৫ টাকা নির্ধারিত হলেও এতদিন ক্রেতারা ৭৭০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনতে পেরেছেন। এক সপ্তাহ ধরে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮১০ টাকা দরে। একইভাবে বেড়েছে পাম তেলের দর। এক সপ্তাহ আগে খোলা পাম তেলের লিটার ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। পাশাপাশি সুপার পাম তেলের লিটারেও ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।