ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানাতে উদাসীনতা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

0
117
ওয়ার্ডে শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগীদের মশারি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা মশারি টানানোর বিষয়ে উদাসীন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৩ জুন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর মেডিসিন বিভাগের মাঝামাঝি জায়গায় অন্যান্য সাধারণ রোগীদের পাশেই পাঁচজন ডেঙ্গু রোগীকে (পুরুষ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে চারজনেরই বিছানার মশারি গুটানো। আর একজনের মশারি টানানো থাকলেও তিনি মশারির বাইরে বিছানায় বসেছিলেন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।

একই ওয়ার্ডে বেলা পৌনে ৩টার দিকে দেখা যায়, তখনো চারজন রোগীর মশারি গুটানো। তবে তখন লোহাগাড়া থেকে আসা মো. রাশেদ ছিলেন মশারির ভেতরে। সকালে তাঁর মশারি ছিল গুটানো। আর সকালে অন্তু রায়ের খাটে মশারি থাকলেও পরে তা খুলে ফেলা হয়। বিছানার ওপর বসে মুঠোফোন দেখছিলেন তিনি। মশারি টানানো হয়নি কেন জানতে চাইলে, গরমের অজুহাত দেন। শুধু তিনি নন, অন্য চারজনও একই কথা বললেন। অথচ ওয়ার্ডে যথেষ্ট আলো–বাতাস ও পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা রয়েছে। হাসপাতালে লোডশেডিংও হয় না।

বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও রোগীরা মশারি টানানোর বিষয়ে উদাসীন বলে জানান চিকিৎসক ও নার্সরা। ডেঙ্গু রোগীরা শুধু রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমায় বলে অন্য রোগীরা জানান। হাসপাতালটির তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ড ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আজ এই পাঁচ ওয়ার্ডে মোট ১৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে শিশু ৬টি।

ডেঙ্গু রোগীরা শুধু রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমায় বলে অন্য রোগীরা জানান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৩ জুন
ডেঙ্গু রোগীরা শুধু রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমায় বলে অন্য রোগীরা জানান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৩ জুন

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গুবিষয়ক দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে গত ও চলতি সপ্তাহে ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১০৩ জন। জেলায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৭০ জন। সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬৭ জন।

ডেঙ্গু রোগী দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে জানান সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, এত দিন গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন করে পাওয়া যেত। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে ৩০ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু পজিটিভ প্রতিবেদন সময়মতো আসে না।

বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও রোগীরা মশারি টানানোর বিষয়ে উদাসীন বলে জানান চিকিৎসক ও নার্সরা। ডেঙ্গু রোগীরা শুধু রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমায় বলে অন্য রোগীরা জানান।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তদের মশারি ব্যবহার করা অবশ্যই দরকার। কিন্তু আমাদের রোগীরা সচেতন নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে একটি এডিস মশা কামড় দিয়ে যদি ওই মশা নতুন করে কাউকে কামড় দেয় তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা থাকে।’

সাধারণ রোগীদের পাশেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের
সাধারণ রোগীদের পাশেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের

গত বুধবার এই হাসপাতালে ভর্তি হন নগরের কর্নেলহাট এলাকা বাসিন্দা বলরাম নাথ (৪২)। বেলা পৌনে ৩টার দিকে তিনিও ছিলেন মশারির বাইরে। তিনি জানান, তার পরিবারের তিনজন একসঙ্গে  আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে। তবে তিনিই শুধু ভর্তি হয়েছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত বলেন, সবাইকে মশারি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রোগীরা সচেতন নয়। বিষয়টা আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে একটি এডিস মশা কামড় দিয়ে যদি ওই মশা নতুন করে কাউকে কামড় দেয় তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা থাকে। মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম

ডেঙ্গু রোগীদের কেন অন্য রোগীদের সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করার মতো জায়গা নেই। তাই ওয়ার্ডের মধ্যে আলাদা কর্নার করে ডেঙ্গু  রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়। মশারি দেওয়া হয়।

ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিরামহীন চলবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। গত বছর চট্টগ্রামে সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে।

প্রণব বল

চট্টগ্রাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.