ভূমি ও কৃষি সংস্কারে আলাদা কমিশন গঠনের দাবি ১১ সংগঠনের

0
14
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মৌলিক ভূমি ও কৃষি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশন নিয়োগের দাবি জানিয়েছে ১১টি সংগঠন। সেখানে বক্তারা বক্তব্য দিচ্ছেন

ভূমি ও কৃষি সংস্কারের জন্য একটি আলাদা কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছে ১১টি সংগঠন। তারা বলছে, এই কমিশন ভূমি ও কৃষি সংস্কারে আশু করণীয়, মধ্য মেয়াদে করণীয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় চিহ্নিত করে সুপারিশমালা তৈরি করবে।
মৌলিক ভূমি ও কৃষি ব্যবস্থাপনা সংস্কারে আলাদা কমিশন নিয়োগের জন্য ১১টি সংগঠন এ দাবি জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তারা এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়।

সংবাদ সম্মেলন আয়োজক সংগঠনগুলো হলো এএলআরডি, নিজেরা করি, ব্লাস্ট, বেলা, বারসিক, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, ইনসিডিন-বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

এএলআরডি বা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দারিদ্র্য, ভূমি বঞ্চনা-বৈষম্য জিইয়ে রেখে দেশে সুশাসন বা সামাজিক ন্যায়বিচার কোনোভাবেই নিশ্চিত করা হবে না। সে জন্য ১০ দফার মাধ্যমে তাঁদের দাবি ও অবস্থান তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো হলো ভূমি ও কৃষি সংস্কারের জন্য একটি আলাদা কমিশন করতে হবে। এই কমিশন ভূমি ও কৃষি সংস্কারে আশু করণীয়, মধ্য মেয়াদে করণীয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় চিহ্নিত করে সুপারিশমালা তৈরি করবে।

ভূমি ও কৃষির জন্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যোগ্য একজন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। তিনি এ দুটি মন্ত্রণালয়ের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।

ভূমি ও বনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত অধিকার এবং তাদের নিজস্ব চাষাবাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। জুমচাষিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কৃষকদের কৃষিঋণের আওতায় এনে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।

সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারার কার্যকর বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।

ভূমিহীন ব্যক্তিদের খাস জমি বন্দোবস্ত ও দখলস্বত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সহজ শর্তে কৃষিঋণসহ কৃষি উপকরণ সহায়তা ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের নিয়মিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

ভূমিহীন কিংবা প্রান্তিক নারী কৃষককে খাস জমি বন্দোবস্তসহ কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি, আলাদা কৃষি কার্ড এবং কৃষি পরিষেবা ও ঋণে নিঃশর্ত অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে যুব ও তরুণদের উৎসাহিত করতে বিশেষ কর্মসূচি, প্রণোদনা ও তৎপরতা বাড়াতে হবে।

ভূমি ব্যবস্থাপনা কাঠামোর সব অফিস, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ এবং ডিজিটাল জরিপ, ই-নামজারির বিদ্যমান দুর্নীতি, হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করার জন্য মনিটরিং ও জবাবদিহি জোরদার করতে হবে। দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলাকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সংখ্যালঘুদের ভূমি-নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার সুরক্ষা দিতে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং একটি স্থায়ী সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জনমত ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহারের আইন চূড়ান্ত করতে হবে।

দেশে বিদ্যমান সংকট ও বৈষম্য নিরসনে সুশাসনকে কেন্দ্রে রেখে যে ছয়টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে, তার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শামসুল হুদা বলেন, ‘তবে আমরা আশা করেছিলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার কৃষি ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে ভূমি ও কৃষি সংস্কারের বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তার জন্য একটি আলাদা কমিশন গঠন করবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ছয়টি কমিশন করা হলেও ভূমি ও কৃষি বিষয়ে কোনো আলাদা কমিশন করা হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, বেলার আইনজীবী রুমানা শারমিন, ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিরালা মার্ডি, কাপেং ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল আজিম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নাহিদ শামস ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.