ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় নিহত বেড়ে ৩৮০০

0
105
তুরস্কের কাহরামানমারাসে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।

তুরস্কে দেশটিতে দুই হাজার ৩০০ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ২৯৩ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাত হাজার ৩৪০ জনকে।

সিরিয়ায় অন্তত এক হাজার ৪৪৪ জন নিহত হয়েছে। দেশজুড়ে তিন হাজার ৪১১ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ভূমিকম্পে উভয় দেশে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এতে অনেকেই আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা ও তুরস্কের অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভূত হয়েছে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭  দশমিক ৯ কিলোমিটার।

সংস্থাটি আরও জানায়, প্রথম ভূমিকম্পের পর আরও কয়েকবার শক্তিশালী কম্পন (আফটার শক) অনুভূত হয়। সবশেষ কম্পনটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠব। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস। অনেক ভবন ধসে পড়েছে ও অনেক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছেন।

তুরস্ক-সিরিয়ায় আরেকটি ভূমিকম্পের আঘাত

শক্তিশালী আরও একটি ভূমিকম্পে সোমবার দ্বিতীয়বারের মত কেঁপে উঠেছে তুরস্ক-সিরিয়া। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ওই ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটের দিকে আঘাত হানে। যেটির উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশের এলবিস্তান জেলা। খবর বিবিসির

গাজিয়ানতেপ শহর থেকে প্রায় ৮০ মাইল উত্তরে এলবিস্তান জেলার অবস্থান। এই গাজিয়ানতেপ শহরের কাছেই সোমবার স্থানীয় সময় ভোরে উৎপত্তি হওয়া ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া মিলিয়ে ৩৭০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

 

তুরস্কে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ ঘোষণা

ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে তুরস্কে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৩০০ জনের বেশি বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে।

সিরিয়ায় এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৩৭০০ জনেরও বেশি।

দুটি দেশেই দুর্গত এলাকাজুড়ে এক বিশাল উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে গ্রাম ও শহরগুলোয় উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ অনুসন্ধানের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

তুরস্কের ভূমিকম্পে কাঁপল গ্রিনল্যান্ডও

তুরস্ক ও সিরিয়ায় আজ সোমবার যখন ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, সে সময় ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড দ্বীপেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খবর রয়টার্সের

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ টিনে লারসেন বলেন, তুরস্কে আঘাত হানা একাধিক ভূমিকম্পের সময় ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডেও ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছে।

ভূমিকম্পে তুরস্কে ধসে পড়েছে ১৭১৮ ভবন

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দেশটিতে ১ হাজার ৭১৮ ভবন ধসে পড়েছে। সোমবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওতকের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এখনও শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও জানান, গাজিআন্তাপ ও কাহরামানমারাস প্রদেশে প্রায় ৯০০ ভবন ধ্বংস হয়েছে। তিনি সারা দেশে ধসে পড়া ভবনের সংখ্যা ১ হাজার ৭১৮ বলে নিশ্চিত করেছেন।

তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুতিনের

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় সমবেদনা ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

পুতিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে বলেছেন, আমরা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে পাঠানো এক বার্তায় পুতিন নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ ও পাশে থাকার কথা বলেছেন।

এদিকে ইসরায়েল তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধার ও মেডিকেল টিম পাঠাবে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অন্তত ৪৩টি দেশ এখন পর্যন্ত সহযোগিতার হাত বাড়াতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও গ্রিস থেকে এরই মধ্যে উদ্ধারকাজে সহযোগিতাকারী ইউনিটগুলো তুরস্কে পৌঁছেছে।

৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। এ সময়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এবং বিদেশে দূতাবাসগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান।

টুইট বার্তায় এরদোয়ান বলেন, ‘৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হলো। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সারাদেশে ও আমাদের বিদেশি দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.