অনেক জনপ্রিয় নাটক আছে নাঈমের। হঠাৎ করেই ভক্তরা তাঁকে নিয়মিত পর্দায় পাচ্ছিলেন না। যেন দিন দিন হারিয়ে ফেলছিলেন নিজেকে। ‘মিশন হান্টডাউন’ যেন তাঁর বিরতি পুষিয়ে দিয়েছে। নাঈমের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। এতেই এই অভিনেতা বেশ খুশি। তবে ভক্তরা শুধু নয়, পরিচালকদের কাছ থেকেও প্রশংসা পাচ্ছেন।
নাঈম বললেন, ‘সিরিজটি মুক্তির পর পরিচালকেরা বলছেন, একটি চরিত্র ১০টা পর্ব একা টেনে নেওয়া চাট্টিখানি কথা না। কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেই তো শুধু হবে না, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা অনেক বড় বিষয়—এ কথাটাই বেশি বেশি শুনছি। এটা ঠিক, আগে নাটকে ৪০ মিনিট দর্শককে ধরে রাখতাম। কিংবা সিরিয়ালে ২০ মিনিট। কিন্তু ১০ পর্বে একজন মানুষ দেখতে বসেছে, দেখার সময় উঠছে না, এটা বড় চ্যালেঞ্জ। সানি সানোয়ারের সঙ্গে প্রথম কাজ, খুবই অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’
চলতি বছরের সাত মাস পার হতে চলছে। এই সময়ে মাত্র ২২ দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন নাঈম। বছর দুয়েক আগেও নাঈম যেখানে মাসে ২২ দিন শুটিং করতেন, এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত শুধু ‘মিশন হান্টডাউন’–এর শুটিং করেছেন। তবে প্রস্তাব যে পাচ্ছেন না, বিষয়টা এমন না। পরিচালকদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। মিটিং করছেন। গল্প নিয়েও আলাপসালাপ হচ্ছে।
নাঈমের মতে, ‘আমার মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে আগাই। এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। অনেক তো করলাম, এখন যেহেতু ভিন্নভাবে ভাবছি, ভাবিই না। দেখা যাক। আমাকে তো নতুনভাবে উপস্থাপন করতে হবে। একই গল্পে বারবার নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই না। নতুন প্রজন্মের কাছে ভালোভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে, ভিন্নরকম কাজ বাংলাদেশেও হচ্ছে।’
কথায় কথায় নাঈম বললেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজের এখন বিশ্বায়ন হচ্ছে। এই সময়টায় সাবধানে পা ফেলতে চান তিনিও, ‘বাংলাদেশের সব কাজ এখন পৃথিবীব্যাপী সবাই দেখেন। রেহানা মরিয়ম নূর কোথায় চলে গেছে, ভাবা যায়! একটা কারাগার দিয়ে চঞ্চল ভাই অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। একজন একজন জয়া আপা, একজন শাকিব ভাই আমাদের কোথায় যে নিয়ে গেছেন, তা তো দৃশ্যমান। আমাদেরও তো দায়িত্ব আছে, তাই না? তাঁরা শুধুই রাস্তা তৈরি করে দেবেন, আর আমরা সেই পথে হাঁটব? আমরাও কি পরের প্রজন্মের জন্য কিছু করব না। আমাদেরও তো কিছু করণীয় আছে!’
এক যুগ ধরে অভিনয় করছেন নাঈম। নিজেকে পুরোদস্তুর একজন পেশাদার অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু বছরের ছয় মাসে একটিমাত্র কাজ করে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা কীভাবে বজায় রাখছেন, জানতে চাইলে এই অভিনয়শিল্পী বললেন, ‘আগে তো অনেক কাজ করেছি। টাকাপয়সাও জমা ছিল। তা ছাড়া অল্প টাকায় কীভাবে চলতে হয়, করোনা তা শিক্ষা দিয়েছে। আমরা কিন্তু করোনার তিন বছর কোনো কাজই করিনি। তারপরও তো চলেছি। না খেয়ে তো মরে যাইনি। তার মানে আমরা চাইলেই পারি। তখনই উপলব্ধি হয়েছে, কাজটা চিত্তের সুখের জন্য হোক।’
‘ছিন্ন’, ‘ভালোবাসার চতুষ্কোণ’, ‘অক্ষয় কোম্পানীর জুতা’, ‘১৩৩৩ জীবননান্দ দাশ’, ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’, ‘পেন্ডুলাম’, ‘আন্টি’, ‘এক নিঝুম অরণ্যে’, ‘প্রজাপতি ভালোবাসা’ ও ‘দ্য প্রেগন্যান্ট’ এসব নাটকে অভিনয় করে খুবই তৃপ্ত নাঈম। তাই এখন বেশ সাবধানী তিনি, ‘প্রায় সময়ই আড্ডায় শুনি, চ্যানেল শিফট করেও বুঝি না কোনটা কোন নাটক? একই ধরনের গল্প। অথচ এই আমারও একটা সময় ছিল, ঈদ মানেই তিন মাস আগে থেকে ব্যস্ততা। গত দুই বছরে ঈদে কোনো কাজ করছি না। অনেকে এ–ও জিজ্ঞেস করেছেন, ঈদে কিছু আসছে কি না। আমার খারাপ লাগলেও কিছুই করার ছিল না।’
নাটকের কাজ কমিয়ে দেওয়া নাঈম নিজেকে ভিন্ন উপায়ে ব্যস্ত রাখতেন। মানসিক প্রশান্তির জন্য নিজের আগের অভিনীত নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়তেন। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত নাটকে অভিনয় করেছি, সবগুলোর স্ক্রিপ্ট সংগ্রহে আছে। এই সময়টায় আগের স্ক্রিপ্টগুলো বের করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। নিজেকে বোঝাতে চাচ্ছি, আমি ব্যস্ত আছি। মানসিকভাবে প্রশান্তি আরকি। তা ছাড়া আমি নিজের ফিটনেস নিয়েও সচেতন থেকেছি।’
নাঈমের সঙ্গে আড্ডার শেষ পর্যায়ে চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে আসি। ২০১০ সালে খিজির হায়াতের ‘জাগো’ সিনেমায় প্রথম বড় পর্দায় প্রথম দেখা যায় নাঈমকে। এরপর লম্বা বিরতি। ২০২১ সালে অরুণ চৌধুরীর ‘জলে জলে তারা’ ছবিতে অভিনয় করেন। আবার কবে বড় পর্দায় দেখা যাবে তাঁকে? নাঈম জানান, আবার প্রস্তুত হচ্ছেন বড় পর্দার জন্য। চলতি বছরের শেষ দিকে চলচ্চিত্র নিয়ে বড় ধরণের খবর দেবেন।