ভার্চ্যুয়াল বাজারে বাড়তি ৫০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির সুযোগ

0
71
পোশাক শিল্প কারখানা

২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকার ভার্চ্যুয়াল বাজারে বাড়তি প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। তবে সুযোগটি কাজে লাগাতে হলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।

পোশাক খাতের জন্য ভার্চ্যুয়াল মার্কেটপ্লেস প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের সম্ভাব্যতা গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষে গবেষণাটি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনারস। এতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইল (প্যাক্ট টু) প্রোগ্রাম।

ভার্চ্যুয়াল মার্কেটপ্লেস প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের সম্ভাব্যতা গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানসহ অন্যরা। গতকাল ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএর কমপ্লেক্সে, ছবি: বিজিএমইএ
বাংলাদেশের পোশাক চার দশক ধরে সফলভাবে কাজ করলেও নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এটির পরিবর্তন করতে চাই। আমরা নিজেদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হতে পারে আমাদের জন্য একটি কৌশলগত এন্ট্রি পয়েন্ট।ফারুক হাসান, সভাপতি, বিজিএমইএ

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে গতকাল বৃহস্পতিবার এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন লাইটক্যাসল পার্টনারসের কর্মকর্তা দিপা সুলতানা। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকায় তৈরি পোশাকের ভার্চ্যুয়াল বাজার বেড়ে ৩০ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। আর ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর বাজারের পোশাক বিক্রির এক-তৃতীয়াংশই অনলাইনে স্থানান্তরিত হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভার্চ্যুয়াল পোশাকের বাজারের মাত্র দশমিক ২০ শতাংশ, ইইউর দশমিক ১০ শতাংশ এবং আফ্রিকার দশমিক ৭৫ শতাংশ হিস্যা নিতে পারলেই ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার মূল্যের অতিরিক্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। যা ডলারের বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার মতো।

লাইটক্যাসলের প্রতিবেদনে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যবসা থেকে ব্যবসা (বিটুবি) এবং ব্যবসা থেকে ভোক্তা—এই দুই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে নতুন বাজার ও ক্রেতার সন্ধান মিলবে। তাতে ব্যবসার পরিমাণ বাড়বে।

ভার্চ্যুয়াল মার্কেটপ্লেস প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের সম্ভাব্যতা গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানসহ অন্যরা। গতকাল ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএর কমপ্লেক্সে, ছবি: বিজিএমইএ

ইতিমধ্যে দেশীয় বাজারের জন্য জাতীয় ডিজিটাল নীতি হলেও আন্তর্জাতিক ই-কমার্সে প্রবেশ করার জন্য কোনো সুস্পষ্ট নীতিকাঠামো হয়নি। অন্যদিকে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা বৈশ্বিক পেমেন্ট গেটওয়ের অনুপস্থিতি, চলতি মূলধন অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ, ছোট ছোট ক্রয়াদেশ প্রক্রিয়াজাত করার জটিল প্রক্রিয়া ইত্যাদি রয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর নেতারা জানান, করোনার সময় যখন পোশাক রপ্তানির আদেশ বাতিল হচ্ছিল আর বাজারগুলোতে ভার্চ্যুয়াল ব্যবসা বাড়ছিল, তখন এই মার্কেটে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রথাগত ব্যাংকিং ও কাস্টমস নিয়মনীতি ভার্চ্যুয়াল বাজারের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থাৎ বেশ কিছু বিধিবিধান বিশেষ করে, ব্যাংকিং ও কাস্টমস নিয়মনীতি সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া ভার্চ্যুয়াল বাজার যেহেতু একটি নতুন বিষয়, তাই শিল্পের ভেতরে কিছু প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পুরো বিষয়টি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে করার জন্য গবেষণাটি করা হয়।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ফ্যাশনের মোট বিক্রির ১৮ শতাংশ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে হয়েছিল। সেটি আগামী ২০২৫ সালে ২৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানান বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক চার দশক ধরে সফলভাবে কাজ করলেও নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এটির পরিবর্তন করতে চাই। আমরা নিজেদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হতে পারে আমাদের জন্য একটি কৌশলগত এন্ট্রি পয়েন্ট।’

ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘বিদায়ী বছরে (২০২৩) আমাদের পোশাক রপ্তানি ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর আগের বছর বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমাদের হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের এই হিস্যা ১২ শতাংশে নিয়ে যেতে পারব। এর জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন এবং তা কাজে লাগাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলার প্রভাব পোশাক রপ্তানিতে কতটা পড়েছে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আগের চেয়ে পণ্য পরিবহনে সময় বেশি লাগছে। জাহাজভাড়া বেড়ে গেছে। তাতে কষ্ট বেড়েছে। আমাদের পোশাক রপ্তানির বড় অংশই ফ্রেইট অন বোর্ড বা এফওবিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় জাহাজভাড়া দেয় বিদেশি ক্রেতারা। ফলে চাপটাও তাদের ওপরই বেশি পড়ছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব, নাভিদুল হক ও ইমরানুর রহমান; স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম এবং লাইটক্যাসল পার্টনারসের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাহেদুল আমিন প্রমুখ।

শোভন ইসলাম বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল বাজারে প্রথমে আমাদের বি–টু–বি এবং পরবর্তী সময়ে বি–টু–সি পর্যায়ের ব্যবসায়ে যেতে হবে। বর্তমানে আমরা অল্প কিছু ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করি। তারা আমাদের উদ্যোক্তাদের দাম প্রতিযোগিতার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাত ঘুরে অ্যামাজন, আলিবাবার মতো মার্কেটপ্লেসে তৈরি পোশাক যাচ্ছে। সেটি আমরা সরাসরি করতে পারি। তাতে সময় বাঁচবে, দামও বেশি মিলবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.