এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেছে। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশ এই সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে পারলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো বাড়ছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি যেমন বাড়তি, তেমনি খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বাড়তি।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর তা ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এলেও সম্প্রতি আবার ৯ শতাংশের ঘরে উঠেছে। চলতি বছরের জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কাছাকাছি উঠে গেছে।
তবে বিশ্বব্যাংকের খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক ওই হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমলেও এখনো প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, মিসর, জাপান, ভিয়েতনাম ও আর্জেন্টিনার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখনো বাড়তি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল ও মালদ্বীপে মূল্যস্ফীতির সূচক নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া সব দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মার্চ-জুন সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ছিল জিম্বাবুয়েতে ৮০ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি ছিল লেবাননে, সেখানেও তা ৪৪ শতাংশ। মিসরে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমছে। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কৃষি ও শস্যজাতীয় খাদ্যের দাম ৪ থেকে ১২ শতাংশ কমেছে। মূলত ভুট্টার দাম কমার কারণে শস্যজাতীয় খাদ্যের দাম কমেছে। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় এই সপ্তাহে ভুট্টার দাম ২১ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে গমের দাম ৩ শতাংশ কমলেও চালের দাম ১ শতাংশ বেড়েছে।
এ ছাড়া বার্ষিক হিসাবের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ভুট্টা ও গমের দাম এক বছর আগের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম, তবে চালের দাম ১৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনা করে বিশ্বব্যাংক বলছে, ভুট্টার দাম এখন ৪ শতাংশ কম, তবে গম ও চালের দাম ১ ও ৩ শতাংশ বাড়তি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার খাদ্য মূল্য সূচকও গত জুন মাসে কমেছে। গত মাসে তা ১২২ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমে আসে, আগের মে মাসে যা ছিল ১২৪। জানা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের পর এফএও খাদ্য মূল্য সূচক এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
২০২২ সালের জুন মাসে এফএওর খাদ্য মূল্য সূচক ছিল ১৫৪ দশমিক ৭। অর্থাৎ সেই তুলনায় এবারের জুন মাসে খাদ্য মূল্য সূচক অনেকটাই কমেছে। বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরত আসা, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোতে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নয়ন ও তেলের দাম হ্রাসের কারণে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্য এখন কমতির দিকে।
তবে রাশিয়া কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্য পরিবহন চুক্তি নবায়ন করতে রাজি হয়নি। এতে গমের দাম বিশ্ববাজারে আবারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীর শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত ইউক্রেন বিশ্ববাজারের চাহিদার প্রায় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ শস্য সরবরাহ করে। সে কারণে কৃষ্ণসাগর চুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা–সংকটের প্রতি সাড়া হিসেবে সংস্থাটি ২০২২ সালের এপ্রিলে ৩ হাজার কোটি ডলারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার নতুন প্রকল্পে দেওয়ার কথা বলা হয়। ওই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়।