ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাতে খুচরা বাজারে দামে বড় কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
অস্থির হয়ে ওঠা পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু তাতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম যে হারে কমেছে, সে হারে কমেনি খুচরা পর্যায়ে। উল্টো খুচরায় দেশি পেঁয়াজের দাম গতকাল ৫ টাকা বেড়ে গেছে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের যথেষ্ট সরবরাহ এখনো বাজারে আসেনি।
পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ এখন বাজারে এসেছে, সেগুলোর মানও খুব বেশি ভালো নয়। তাই এসব পেঁয়াজের চাহিদা কম। বাজারে এখনো দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এসব বাজারের সব বিক্রেতার কাছে নেই। যাঁরা এই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাঁরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ যেগুলো বাজারে এসেছে, সেগুলো একটু ভেজা। তাতে এসব পেঁয়াজ বাছাই করে বিক্রি করতে হচ্ছে। খুচরায় এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ এখন পর্যন্ত খুব বেশি বাজারে আসেনি। আবার যেসব পেঁয়াজ বাজারে এসেছে, সেগুলোর মানও খুব ভালো নয়। তাতে এসব পেঁয়াজের বিক্রি কম। আবার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজ থাকায় পাইকারদের কাছ থেকে তাঁরা আমদানি করা পেঁয়াজ খুব বেশি কিনছেন না।
মগবাজারের লামিছা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা এমদাদুল হক বলেন, ‘দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে দামের পার্থক্য খুব বেশি নয়। তাই ক্রেতারা এখন পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজই বেশি কিনছেন। আমরা দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা এখনো ভারতীয় পেঁয়াজ হাতে পাইনি।’
শুক্রবার ঢাকার বাজারের যে মূল্যতালিকা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দিয়েছে, সেখানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন, প্রথম লটে আমদানি করা পেঁয়াজের মান ভালো না হওয়ায় এসব পেঁয়াজের প্রতি খুচরা ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম।
এদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গতকাল আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা।
আমদানি পরিস্থিতি
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পেঁয়াজ আমদানির সর্বশেষ ৮ জুনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ৫ লাখ ৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কাস্টমসের তথ্য বলছে, আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর গত চার দিনে ভারত থেকে ২০ হাজার ৫৭৫ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ৫ থেকে ১০ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভারত থেকে ১২১টি ট্রাকে করে মোট ৩ হাজার ৩২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
এতে হিলি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে চোখে পড়ার মতো। বাংলাহিলি বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় আমদানিকারকদের কাছ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ ৩২ টাকা কেজি দরে কিনেছি। পরে তা পাইকারিতে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’
এ ছাড়া বেনাপোল দিয়ে গত কয়েক দিনে এসেছে ২৭০ মেট্রিক টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উৎপাদন ভালো হলে মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবেই, দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ লাখ টনের মতো।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, হিলি ও যশোর প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম।