ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর: আসিফ নজরুল

0
5
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আজ শুক্রবার এক পোস্টে এ কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (৬৪ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। গতকাল প্রকাশিত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জরিপে এটি দেখা গেছে।

‘আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্রসংগঠন, মাদ্রাসা, রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। সর্বশেষে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উসকানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’ লিখেছেন আসিফ নজরুল।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনায় গত মঙ্গলবার উদ্বেগ জানায় ভারত। এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, চিন্ময়কে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নাকচ করায় ভারত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং দেবতার অবমাননা ও মন্দিরে চুরি-ভাঙচুরের একাধিক নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিটি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমন একটি বিষয় নিয়ে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এরপরও অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে সরকার লক্ষ করছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করার ঘটনাকে কিছু মহল ভুলভাবে তুলে ধরছে। (ভারতের) এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু সত্যকে ভুলভাবে তুলে ধরছে না, পাশাপাশি দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনারও পরিপন্থী।

ইসকন বাংলাদেশ থেকে গত জুলাইয়ে বহিষ্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠান চট্টগ্রামের আদালত। সেদিন চিন্ময়ের অনুসারী এবং পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষে হয়। এ সময় সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।

এদিকে ভারতের সংসদেও গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। লিখিত প্রশ্নোত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কৃতি বর্ধন সিং বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব বলে মনে করছে ভারত।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.