ভাগ্যটা তাহলে ঝুলেই থাকল বাংলাদেশের!
ভালো-মন্দ মিশিয়ে করা বোলিংয়ের পর হতাশার ব্যাটিংই লিখে দিল গল্পটা। ভারতের বিপক্ষে আগের ১৭ টি-টোয়েন্টির ১৬ ম্যাচে যা নিয়তি বাংলাদেশের—সেই হারই সঙ্গী হলো আবার। দুবাইয়ে এবার হার ৪১ রানের। হিসাব এখন সোজা—বৃহস্পতিবার পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই ফাইনালে, না হলে ফেরার টিকিট। ভারত অবশ্য এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে বুধবার বাংলাদেশকে হারিয়েই।
ফাইনালের পথে বাংলাদেশও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত বুধবারই। ৬ ওভারে ভারত তুলে ফেলেছিল ৭২ রান। সেখান থেকে ২০ ওভার শেষে ১৬৮ রানে ওদের থামানোটা খারাপ ছিল না। তখনো মনে হচ্ছিল, সুযোগ আছে। কিন্তু ভারতের বোলারদের ধাঁধা মেলাতে পারলেন শুধু সাইফ হাসান। অন্যরা যেন কুলদীপ-বুমরার সামনে অসহায় হয়ে পড়লেন।

শুরুটা হয়েছিল ওপেনার তানজিদ হাসানকে দিয়ে। বুমরার গুড লেন্থে পড়া বল বুঝতেই পারেননি, মিড অনে সহজ ক্যাচ দিলেন শিবম দুবেকে। এরপর এলেন পারভেজ হোসেন। বুমরাকে এক দৃষ্টিনন্দন ছক্কা মারলেও প্রথম ৭ বলে করেছিলেন শূন্য রান। পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১৯ বলে ২১ রান করে কুলদীপ যাদবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন।
পারভেজ অন্তত কিছু রান করেছেন। বাকিদের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁরা শুধু উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। স্কোরকার্ড দেখলেই বোঝা যাবে দুরবস্থাটা—সাইফ আর পারভেজ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি! তবু পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেটে ৪৪ রান ছিল। তখনো মনে হচ্ছিল অসম্ভব নয়। কিন্তু একে একে উইকেট পড়তে শুরু করলে ভেঙে পড়ে সব আশা।

বাংলাদেশের লড়াইটুকু আসলে টিকে ছিল সাইফ হাসানের ব্যাটে। দুবার জীবন পেয়েছেন—একবার হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ফসকে, আরেকবার সাঞ্জু স্যামসনের সৌজন্যে। তবে খেলেছেন কিছু চোখধাঁধানো শটও। শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ৬৯ রান করেছেন ৩ চার আর ৫ ছক্কায়। বুমরার বলে অক্ষর প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগেই অবশ্য ম্যাচটা অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে অলআউট—৩ বল বাকি থাকতেই হারের আনুষ্ঠানিকতা সারল বাংলাদেশ।
অথচ বোলিংয়ে বাজে শুরুর পরও শেষটা ভালোই হয়েছিল। পাঁজরের চোটে না খেলা লিটন দাসের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাকের আলী নিয়েছিলেন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত। একাদশে এসেছিল চারটি পরিবর্তনও। প্রথম ৩ ওভারে ভারত তুলেছিল ১৭ রান। পরের ৩ ওভারে করল ৬০! সেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ।

রিশাদ হোসেন শুধু বোলিং নয়, ফিল্ডিংয়েও হয়ে উঠলেন দলের ত্রাতা। পাওয়ার প্লের পর তাঁর ২ উইকেট বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরাল। জাকের আলী ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পর অভিষেক শর্মা মাত্র ২৫ বলে তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৭৫ রানে রানআউট হয়ে থামলেন রিশাদের দুর্দান্ত থ্রোতে।
শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলাররা সবাই ভালো করেছেন। দুই ওভারে সাইফ দিয়েছেন মাত্র ৭ রান। প্রথম দুই ওভারে ৩৩ রান দেওয়া সাইফউদ্দিন শেষ ওভারে দিলেন মাত্র ৪। কিন্তু তাতে আর কী লাভ!
ভারতের করা রান তাড়া করার কাছাকাছিও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে লেখা হলো হার। তবে সুযোগ এখনো আছে। আজ পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। আর রোববার শিরোপা লড়াইয়ে তাদের জন্য অপেক্ষায় থাকবে সেই ভারতই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬ (অভিষেক ৭৫, পান্ডিয়া ৩৮, গিল ২৯, অক্ষর ১০; রিশাদ ২/২৭, তানজিম ১/২৯, মোস্তাফিজ ১/৩৩, সাইফউদ্দিন ১/৩৭)।
বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১২৭ (সাইফ ৬৯, পারভেজ ২১; কুলদীপ ৩/১৮, বুমরা ২/১৮)। ফল: ভারত ৪১ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অভিষেক শর্মা।
মাহমুদুল হাসান
দুবাই থেকে