দিল্লিকে (ভারত) ডমিনেট করতেই আমেরিকা বাংলাদেশকে খেলার মাঠ বানাতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, ‘দিল্লিকে আমেরিকা আর দোনোমোনো খেলতে দেবে না। ক্লোজ এলাই হিসেবে পাশে চায়। ক্লোজ এলাই হিসেবে পুরোপুরি পাশে না পেলে তারা ভারতের পার্শ্ববর্তী বন্ধু দেশ বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের পছন্দের পুতুল কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চেষ্টা করবে।’
সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ইনু বলেন, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে হঠাৎ বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকা অতি উৎসাহী হয়ে উঠছে। নানা বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আমেরিকার এত উৎসাহ কেন? তারা গণতন্ত্র টার্ম ইউজ করছে। অথচ পৃথিবীতে এমন একটি দেশের নামও কেউ বলতে পারবে না যেখানে আমেরিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বরং আমেরিকা যখন কোনো দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের সরকার বা বিরোধী দলের চেয়ে জনগণের জন্য বেশী দুর্ভোগ বয়ে আনে। আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে আমেরিকার হঠাৎ এই অতি উৎসাহের হেতু কী? গণতন্ত্র নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ!’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সাবেক এই সদস্য বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের পুরোনো কৌশল প্রয়োগ করছে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, আঙুল বাকা করতে চেষ্টা করবে। দিল্লি তথা ভারতকে ডমিনেট করতে ভারতের বন্ধু দেশ বাংলাদেশকে প্রেশারাইজ করে ভারতকে কাবু করতে চেষ্টা করবে। দর কষাকষি হচ্ছে মূলত আমেরিকা আর ইন্ডিয়ার মধ্যে। পলিটিক্যাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে খুবই ছোট, যা থেকে আমেরিকা খুব বেশি বেনিফিটেড হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ২০ হাজার মাইল দূরের কেউ এসে আমাদের দেশকে খেলার মাঠ বানাবে আমরা সেটা হতে দেবো না। বাংলাদেশকে আমরা দাম দিয়ে কিনেছি। কারো দানে পাওয়া নয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সঠিক সময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এটাই মোদ্দা কথা।
ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত যারা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে না পেয়ে বিদেশি বিভিন্ন মহলের কাছে গিয়ে ধর্না দিয়ে খাল কেটে কুমির আনছে তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ইস্যুতে মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা কী বলবেন, আর কী করছেন- তা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি থাকা জরুরি প্রয়োজন নয় কি? তাদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, দেশটার মধ্যে ব্যাড়াছ্যাড়া লেগে গেছে।
তিনি আরও বলেন, কয়লার বিল বাকি ৪ হাজার কোটি টাকা, বিমান সংস্থার বাকি ২১ হাজার ডলার। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাকি ১৭ হাজার কোটি টাকা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এত বাকি কেন? কীভাবে? দেশটার মধ্যে কি ব্যাড়াছ্যাড়া লেগে আছে!
জাসদ সভাপতি বলেন, যে কোনো মূল্যে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত বাখতে হবে। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
সরকার জরুরি ভিত্তিতে কুইক রেন্টাল করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসা শুরু করল তখন এদের বসিয়ে রেখে ১০ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ কেন দেবেন? দেশের কতিপয় র্শীষ কোম্পানিকে গত ৯ মাসে কুইক রেন্টাল কনসেপ্টের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
ইনু বলেন, কতিপয় বিদেশি মহল জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘোঁট পাকাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সঙ্গীদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রশ্ন ফয়সালা করতে চায়।
বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের ট্রেনে উঠুন, নির্বাচন ঠেকাতে এলে ট্রেনে কাটা পড়বেন। কলার ভেলায় চড়ে সাগরে ভেসে যাবেন। এই দেশে ১৯৭৫, ১৯৮২ বা এক-এগোরোর মতো ভূতের সরকার, সামরিক সরকার হবে না।