ম্যাগনাস কার্লসেন স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছেড়েছিলেন। সিংহাসনটা বিশ্ব দাবার। নরওয়েজীয় তারকার ১০ বছরের রাজত্বের উত্তরাধিকারী কে হবেন, তা জানতে এপ্রিল মাসের প্রায় পুরোটাজুড়েই কাজাখস্তানের আস্তানায় চোখ রেখেছিলেন দাবা-ভক্তরা। সেখানেই যে আস্তানা গেড়েছিলেন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডিং লিরেন ও ইয়ান নেপোমনিয়াচতচি।
অবিশ্বাস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর আজ মাসের শেষ দিনে বিশ্ব দাবার মুকুট মাথায় তুললেন চীনের ডিং লিরেন। এই প্রথম ছেলেদের দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন চীনের কেউ। মেয়েদের দাবার বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও একজন চীনা। আগামী জুলাইয়েই অবশ্য নারী চ্যাম্পিয়ন লেই তিংচিকে মুকুট ধরে রাখার লড়াইয়ে নামতে হবে আবার।
ডিং লিরেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন ভাগ্যক্রমেই। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টেই প্রথমে সুযোগ পাননি। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর রুশ দাবাড়ু সের্গেই কারিয়াকিন খোলাখুলিভাবেই সমর্থন করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়াকে। এ নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতিও কম দেননি কারিয়াকিন। যে কারণে ক্যান্ডিডেটস দাবা শুরুর আগে শেষ মুহূর্তে তাঁকে নিষিদ্ধ করে ডিং লিরেনকে ডাকে আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন (ফিদে)। সেই ডিং লিরেন ক্যান্ডিডেটস দাবায় নেপোমনিয়াচতচির পেছনে থেকে রানারআপ হয়ে সুযোগ পান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামার। এরপর যা হলো, তা তো ইতিহাস।
কাজাখস্তানে ১৪ রাউন্ডের ক্ল্যাসিক দাবার মূল প্রতিযোগিতা শেষে আলাদা করা যায়নি চীনের লিরেন ও রাশিয়ার নেপোমনিয়াচতচিকে। গতকাল সেটি শেষ হয় ৭-৭ পয়েন্টে সমতায়। শিরোপার নিষ্পত্তির জন্য আজ দুজন খেলেন র্যাপিড দাবার চার গেমের প্লে-অফ। সেখানেও প্রথম তিন গেমে আলাদা করা যায়নি কাউকে, ড্র হয়েছিল তিনটি গেমই। র্যাপিড দাবাও সমতায় শেষ হলে যেতে হতো আরও সংক্ষিপ্ত ব্লিৎজ দাবায়। সেটির অবশ্য আর প্রয়োজন হয়নি। ৩০ বছর বয়সী ডিং লিরেন জিতে যান র্যাপিড দাবার শেষ গেমটা।
সেই জয়ের পর দাবার ১৭তম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আবেগ সামলাতে পারেননি। পরে সংবাদ সম্মেলনে লিরেন বর্ণনা করেছেন সেই মুহূর্তের কথা, ‘যে মুহূর্তে ইয়ান (নেপোমনিয়াচতচি) হার মেনে নিল, খুব আবেগময় একটা মুহূর্ত ছিল তখন। আমি আবেগ সামলাতে পারিনি।’
মূল প্রতিযোগিতায় ১১ রাউন্ড পর্যন্ত পিছিয়ে ছিলেন ডিং লিরেন। ১২তম রাউন্ডে নাটকীয় এক জয়ে সমতা ফেরান।
ডিং লিরেনের পূর্বসূরি ম্যাগনাস কার্লসেন ২০২১ সালে নেপোমনিয়াচতচিকে হারিয়েই পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তবে গত বছর কার্লসেন জানিয়ে দেন, তিনি আর শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামবেন না।