ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলাকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে নেবে ভারত

0
4
ভারতের মাটিতে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলাকে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি নয়াদিল্লির

ভারতের মাটিতে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলাকে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষ্য, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এবার কোনোরকম ‘ছাড়’ দেবে না তারা। এমন কোনো হামলা হলে তাৎক্ষণিক ও সমপর্যায়ের সামরিক জবাব দেওয়া হবে।

শনিবার (১০ মে) বিকেলে ভারতের উচ্চপর্যায়ের সরকারি সূত্রের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশলে বড় পরিবর্তন এনেছে ভারত। সীমান্তে চলমান উত্তেজনা এবং সাম্প্রতিক হামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ভবিষ্যতে কোনো হামলা হলে, তা যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত বলেই বিবেচনা করবে ভারত।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, গত কয়েকদিনে রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করে যা।

অবশ্য, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। বিষয়টি প্রথম নিশ্চিত করা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে। শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায়

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, দীর্ঘ এক রাত দুপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমি খুব উৎফুল্লতার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

এ সময় দুই পক্ষকেই তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প।

পরে একই বার্তা আসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর পক্ষ থেকেও। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে রুবিও জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, শান্তির পথ বেছে নেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদি এবং শেহবাজ শরিফের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও রাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করছি।

যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্ততাকারী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বার্তা আসার কিছুক্ষণ পরই এ বিষয়ে বক্তব্য দেয় ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন্স ভারতীয় সময় তিনটা ৩৫ মিনিটে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন্সকে ফোন করেছিলেন। তাদের দুজনের মধ্যে স্থির হয়েছে আজ (শনিবার) বিকেল পাঁচটা থেকে দুই পক্ষই সব ধরনের গোলাগুলি চালানো এবং স্থল, আকাশ ও জলপথে সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে।

এছাড়া, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য শিগগিরই ভারত-পাকিস্তান একসঙ্গে বসতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও ভবিষ্যতের যেকোনো ভারতীয় আগ্রাসনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন সমর্থনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কিছুক্ষণ পর পাক উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও বলেন, আজ বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে উভয়পক্ষ।

তবে, পরমুহূর্তেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, সর্বদা যুদ্ধবিরতির জন্য উন্মুক্তই ছিল পাকিস্তান। কিন্তু, ভারত ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.