মানুষের জীবনের অন্যতম মৌলিক চাহিদা বাসস্থান। তবে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে শুধু বাসস্থান গড়লেই হবে না, পাশাপাশি জানতে এবং মানতে হবে কিছু নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতাও। নতুন বাড়ি বা ভবন নির্মাণের আগে সঠিক পরিকল্পনার ছক অনুমোদন, অর্থের ঘাটতি থাকলে ঋণের সংস্থান এবং সঠিক পন্থায় যথাযথ পক্ষের কাছ থেকে আবাসন সুবিধা গ্রহণসহ নানা বিষয় রয়েছে। স্বপ্নের আবাসন নির্মাণে সেবাদানকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যাক।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)
বাংলাদেশের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র বাণিজ্যিক সংস্থা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা রিহ্যাব। ১৯৯১ সালে মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া রিহ্যাবের বর্তমান সদস্য প্রতিষ্ঠান ১১৯১। নগরায়ণের ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ক্রমেই শহরমুখী হচ্ছে। ফলে বাড়ছে আবাসনের চাহিদা। অতিরিক্ত জনগোষ্ঠীর এই চাহিদা মেটাতে সরকারের উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতির মধ্যে নানা শৃঙ্খলা তৈরিতে নির্দেশকের ভূমিকা পালন করছে রিহ্যাব।
‘রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার’ এই সংস্থাটির একটি বার্ষিক আয়োজন। যেখানে দেশের অধিকাংশ রিয়েল এস্টেট, বাড়ি নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ আবাসন-সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। শুধু তা-ই নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ দেশে গৃহনির্মাণে উদ্বুদ্ধ করতে বিদেশেও অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)
রাজউক বাংলাদেশের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি সংস্থা, যা রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে থাকে। এই সংস্থাটির যাত্রা শুরু ১৯৫৬ সালে। ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ হওয়ার আগে এর নাম ছিল ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’।
পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য রাজউক ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। দালিলিক নিয়মকানুনের মাধ্যমে ঢাকাকে পরিকল্পিত মহানগরী রূপে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে রাজউক। ব্যক্তিবিশেষ ও প্রকল্পের জন্য ভূমিব্যবস্থার ছাড়পত্র প্রদান এবং ইমারতের নকশাও অনুমোদন করে সংস্থাটি।
এ ছাড়া ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন উপশহর ও নতুন শহর প্রকল্প, সাইট অ্যান্ড সার্ভিস প্রকল্পের বিষয়গুলো দেখভাল করে থাকে রাজউক। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ও শিল্পনগরী তৈরি, রাস্তা, উড়ালসড়ক, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ, বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, বাজার, শপিং সেন্টার, কার পার্কিং, ধর্মীয় স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, উন্মুক্ত স্থান, জলাধার, পার্ক, খেলার মাঠ ইত্যাদির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাও এই সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন প্রকল্প রাজউকের তত্ত্বাবধানে থাকে। এর সঙ্গে আছে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মতো জনহিতকর উদ্যোগগুলোও। উল্লেখ্য, রাজউক বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নে ছয়টি, জিওবি ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সাতটি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রাজধানীর ক্ষেত্রে যেমন রাজউক নকশা অনুমোদন করে তেমনি চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)
আবাসন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) উল্লেখযোগ্য। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। দেশের গৃহায়ণ সমস্যার সমাধানে জনসাধারণকে গৃহ নির্মাণ খাতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। আবাসন নির্মাণের কাজটুকু মানুষ যেন কিছুটা স্বস্তিতে ও নির্ভারভাবে করতে পারে—তা নিশ্চিত করাই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়স্ক, সুস্থ ও চুক্তি করার যোগ্যতাসম্পন্ন এবং ঋণ পরিশোধে সক্ষম বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। জেলা, উপজেলা ও মহানগরসহ ইত্যাদির অবস্থানভেদে প্রতি বর্গফুটে নির্দিষ্ট পরিমাণ হারে এ ঋণ হতে পারে ৮০ লাখ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। তবে প্রতিষ্ঠানটির গৃহ নির্মাণ করতে যে অর্থের প্রয়োজন হয়, পুরো টাকাই ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে ঋণগ্রহীতাকে নিরুৎসাহিত করে। কারণ এতে ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণ পরিশোধ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
তাই করপোরেশন ৮০:২০ অনুপাতে ঋণ প্রদান করে থাকে। যার সুদের হার ৭ থেকে ৯ শতাংশ। সরাসরি ছাড়াও চাইলে অনলাইনেও ঋণের জন্য আবেদন করা যায়।