বড় দেশগুলোর প্রতিযোগিতা বাড়ছে

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত

0
157
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের ওপর কড়া নজরদারি করে থাকে পরাশক্তিধর দেশগুলো। রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে আধিপত্য বজায় রাখার এ কৌশল বেশ পুরোনো। নিজেদের দখলে রেখে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকাসহ প্রায় সব অঞ্চলে সমানে ব্যবসা করে যাচ্ছে। চীনের উত্থান, ইউক্রেন সংকট ও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলকে ঘিরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব-দ্বীপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য দীর্ঘদিনের। এখন এ দৌড়ে যোগ হয়েছে চীন, রাশিয়া, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র।

চীনের উত্থানকে কেন্দ্র করে গত এক দশকের ওপর এ প্রতিযোগিতা আরও জোরালো হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ব এক জটিল পরিস্থিতিতে রয়েছে। বিশ্বের ব্যবসার প্যারাডাইম শিফট বা দৃশ্যত পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। ফলে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সুরক্ষিত করতে আধিপত্য বিস্তারে পরাশক্তিগুলো নিয়ে এসেছে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), ভারত প্রশান্ত অর্থনৈতিক ফোরাম (আইপিইএফ), বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের (জিএসআই) মতো বৈশ্বিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম। সবাই দল ভারীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বড় বিনিয়োগকারী। পিছিয়ে নেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও। উন্নয়ন সহযোগী জাপানের অংশগ্রহণও দিন দিন বাড়ছে। আর নীরবে ব্যবসা করে যাচ্ছে জার্মানি। ভূরাজনৈতিক কারণেই প্রভাবশালী দেশগুলোর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের ওপর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো কৌশলগত খাতে নিজেদের হিস্যা বাড়িয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তার অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশে নিজ দেশের অধিকার বাড়াতে দরপত্রে অংশগ্রহণ, দরকষাকষি ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করছে দেশগুলো। গত ৭ জুন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বৈঠকে বাংলাদেশে বর্তমান জ্বালানি চ্যালেঞ্জগুলোসহ মার্কিন জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে টেকসই, ন্যায়সংগত ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। অন্য দেশের দূতাবাসগুলোও নিজ নিজ দেশের কোম্পানিগুলোর পক্ষে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জটিল প্রযুক্তি, বড় অর্থের বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ ঝুঁকি বেশি হওয়ার কারণে বিশ্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে পরাশক্তিগুলোর উপস্থিতি বেশি। বাংলাদেশেও এ চিত্র ভিন্ন নয়। তবে স্বার্থ রক্ষা করে দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করার পরামর্শ তাঁদের।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, পরাশক্তিগুলো ধরলাম আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। আমি সেই সুযোগ না দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের কাছ থেকে কিছু নিলাম না। তাহলে প্রশ্ন চলে আসে, আমাদের কি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রয়েছে? পরাশক্তিগুলো যাতে আধিপত্য বিস্তার না করতে পারে, এ জন্য দরকার একটি নীতি কাঠামো। তাতে থাকতে হবে জনগণের সম্পৃক্ততা, গণশুনানি, জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতার মতো বিষয়গুলো।

হুমায়ুন কবির বলেন, পরাশক্তিগুলো নিজ স্বার্থে অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে চাইবে। এক্ষেত্রে আমাদের যখন একটি নীতি কাঠামো থাকবে, তখন তাদের বলতে পারব, যা ইচ্ছা তাই করা যাবে না। আমাদের নিজ থেকেই বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে হবে। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে এ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বা জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। এটা নিশ্চিত করতে হবে।

২০১০ সালের পর থেকে দেশের বিদ্যুৎ খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। গত ১০-১২ বছরে শুধু এ খাতে ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এলএনজি, স্মার্ট বিদ্যুৎ-গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা,  সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প স্থাপন, কার্বন নির্গমন হ্রাসের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এসব খাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ বিপুল বাজার ধরতে এবং ভূকৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশে নিজেদের কার্যক্রম বাড়াতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মতৎপরতা এক দশক ধরে বেড়েই চলছে।

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, তেল-গাস অনুসন্ধানে এক্সনমবিলসহ বড় বড় কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন। যত বিদেশি কোম্পানি আসবে, তত ভালো দেশের জন্য।

জ্বালানি খাতে রুশ-মার্কিন তৎপরতা

জানা গেছে, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় নির্মিত। দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলো স্বাধীনতার পরও ছিল ব্রিটিশ শেল কোম্পানির আওতাধীন, পরে যা বাংলাদেশ কিনে নেয়। পরবর্তী সময়ে দেশের গ্যাস খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ে। এখানে কাজ করে দেশটির ইউনিকল ও শেভরন। বর্তমানের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনকারী ক্ষেত্র বিবিয়ানার মালিক শেভরন। দেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ আসে শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে। আমদানি করা গ্যাস এলএনজির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেটের ভূমিকা মুখ্য। সমুদ্রে কোম্পানিটির একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। এক্সিলারেট নিজেই এটি পরিচালনা করে। আরেকটি ভাড়া দিয়েছে। আরও একটি টার্মিনালের কাজ পেতে যাচ্ছে এক্সিলারেট। সম্প্রতি সমুদ্রের পুরো ব্লকে কাজের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন জায়েন্ট এক্সনমবিল। স্থলভাগেও কাজে আগ্রহী এ কোম্পানি। কোম্পানিটিও কাজ পেতে যাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সজেন্ডার নোভাক জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী রাশিয়া। গত ৮ জুন তিনি বলেন, রুশ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে বিদ্যুৎ খাতে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে রাশিয়া। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, নতুন প্রকল্প, আধুনিকায়ন বা কোনো কেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানোর কাজেও অংশ নিতে চায় রুশ প্রতিষ্ঠানগুলো।

গ্যাসকূপ খননের মাধ্যমে বছরদশেক আগে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে প্রবেশ করে রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম। কোম্পানিটি এখন ভোলা দ্বীপাঞ্চলসহ দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বেশি করে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের ১৩ থেকে ১৫ মার্চ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত রাশিয়া-বাংলাদেশ ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন সংলাপে (আইজিসি) বাংলাদেশে জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরে মস্কো। রুশ কোম্পানি রোজনেপ্ট জ্বালানি তেল খাতে কাজ করতে চায়। গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে আগ্রহী গ্যাজপ্রম। ইউএসটি-লুগা এলএনজি প্রোডাকশন প্ল্যান্ট থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি সরবরাহে রাশকেম অ্যালায়েন্সের সঙ্গে পেট্রোবাংলার চুক্তির বিষয়েও আলোচনা চলছে। আরেক রাশিয়ান কোম্পানি এসইউইকে জেএসসির মাধ্যমে কয়লা খাতেও কাজ করতে চাইছে মস্কো।

ভারতের ওনএনজিসি কাজ করছে বাংলাদেশের অগভীর সমুদ্রে। ডিজেল পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলে নিজেদের অংশগ্রহণ এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে ভারত। দেশটি পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহেও আগ্রহী। চীনের সিনোপ্যাক, বিজিপি বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননে কাজ করছে। পার্বত্য এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ভারত ও চীন উভয় দেশের একাধিক কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনের সিমএমসি কাজ করছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে। বিপিসির সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার সিঙ্গেলমুরিং পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনের সিপিপিইসি।

বিদ্যুতে চীন-ভারত দ্বৈত রথ

ঘোড়াশালসহ অনেক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বাধীনতার পর গড়ে ওঠে রুশ তথা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায়। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। তবে গত কয়েক দশকে দেশের বিদ্যুৎ খাতে বেড়েছে চীন ও ভারতের অংশীদারিত্ব। পটুয়াখালীর পায়রায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত হয়েছে চীন-বাংলাদেশের যৌথ মালিকানার ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানে সমান ক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে একই অংশীদারিত্বে। খুলনায় রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণেও রয়েছে চীনা কোম্পানি। নর্থয়েস্ট-সিএমসি যৌথভাবে ৫০০ মেগাওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। সোনাগাজীতে ৭৪৬ কোটি টাকার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রয়েছে চীনের টিআরআইএনএ-এইচওয়াইডিসি। মিরসরাইয়ে ১০৬৮ কোটি টাকার ১৫০ মেগাওয়াট এবং কড্ডায় ১২৭০ কোটি টাকার ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণ করেছে যথাক্রমে চীনের সিনো হাইড্রো আর সিসিসিই-এফইপিইসি। এ ছাড়া আরও অনেকগুলো প্রকল্পে কাজ করছে চীনা কোম্পানি।

বাগেরহাটের রামপালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। একই কোম্পানির ঠিকাদার ভারতের ভেল, যারা সিদ্ধিরগঞ্জে ২৪০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। এতে বছরে খরচ হয় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। আদানির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে, যা ১২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। এই বিদ্যুৎ আনতে ব্যয় হবে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। রিলায়েন্সসহ কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো বাংলাদেশের সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাতেও চীন ও ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে।  পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে চীনের কোম্পানি ২৩ হাজার কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্পে কাজ করছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চীনের সেপকো, সিসিই, ফুজিয়ান ইলেক্ট্রিক ইত্যাদি। ভারতের তিনটি কোম্পানি ২০ হাজার কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ভারতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে– লারসান অ্যান্ড ট্রুবো, কেইসি ইত্যাদি। জাপানের টোকিও ইলেক্ট্রিক ৪৫৬৭ কোটি টাকা এবং মালয়েশিয়ার এইচজি পাওয়ার ৫৮০০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের কাজ পেয়েছে। এই দুই প্রকল্পের ঠিকাদার অধিকাংশই চীন ও ভারতের।

বিতরণে সবচেয়ে বেশি কাজ হচ্ছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি)। কোম্পানিটির বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি ১৭৩২৫ কোটি টাকার, যা বাস্তবায়ন করছে চীনের টিবিইএ। ২৩৩৪ কোটি এবং ১৯৫৪ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প বাস্তবায় করছে চীনের চায়না রেলওয়ে, সিচুয়ান ইলেক্ট্রিক, সিসিসিই এবং ভারতের  লারসন অ্যান্ড ট্রুবো, ইউনিভার্সাল ইত্যাদি কোম্পানি। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে চীনের কোম্পানির আধিপত্য চলছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেনজেন স্টার।

পিছিয়ে নেই জাপানও

দেশের বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান প্রণীত হয়েছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়। জাইকা নিয়মিত এই পরিকল্পনা হালনাগাদেও কাজ করছে। মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহায়তা করেছে জাইকা। এ প্রকল্পে জাইকা প্রায় ৪৪ হাজার কোটি ঋণ দিয়েছে। এখানে কাজ করছে তোশিবা, সুমিতোমর মতো জাপানি কোম্পানি। জাপানের জেরা কোম্পানি স্পট এলএনজি সরবরাহে কাজ করছে। দেশি গ্রুপ সামিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোম্পানিটি এলএনজি খাতে বিনিয়োগেও এগিয়ে এসেছে।

পারমাণবিকে এগিয়ে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাগড়া

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। প্রকল্পটিতে রাশিয়া প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রুশ-মার্কিন বিরোধের ছায়া পড়েছে রূপপুর প্রকল্পে। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির মুখে সম্প্রতি রূপপুরের মালপত্র নিয়ে আসা একটি জাহাজ বাংলাদেশে মাল খালাস করতে পারেনি। পরে অন্য জাহাজে এই মাল দেশে আসে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রূপপুরের লেনদেনে বিঘ্ন ঘটছে। তাই চীনা মুদ্রায় লেনদেনে ঢাকা-মস্কো সম্মত হলে তাতেও আপত্তি জানায় ওয়াশিংটন। সর্বশেষ রোসাটমের একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রকল্পটির এগিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে এই নিষেধাজ্ঞায় রূপপুরের কাজে প্রভাব ফেলবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র রূপপুর প্রকল্পে সহযোগিতার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা ঢাকাকে জানিয়েছে। দেশে দ্বিতীয় পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা নিয়েও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। এদিকে রূপপুর প্রকল্পের পরামর্শসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ঢাকা-দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে।

তাসনিম মহসিন ও হাসনাইন ইমতিয়াজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.