দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে কি না, আজ সোমবারেও তা স্পষ্ট হলো না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা সোমবার এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শুধু বলেছেন, জোহানেসবার্গে বহু রাষ্ট্রীয় নেতা আসছেন। তাঁদের কার কার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে, সেই সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই আগেভাগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
শুধু শেখ হাসিনাই নন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গেও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে প্রবল জল্পনা রয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব সেটা নিয়েও কিছু বলেননি। প্রধানমন্ত্রী মোদি আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে জোহানেসবার্গের উদ্দেশে রওনা হবেন। ব্রিকস সম্মেলন শেষে তিনি গ্রিস সফরে যাবেন।
ব্রিকস সম্মেলন শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে মোদির বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত থাকবেন শেখ হাসিনা। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দুবার বৈঠকের যৌক্তিকতা কতখানি, তা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রধান প্রশ্ন।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলও যৌক্তিকতার সেই প্রশ্ন অস্বীকার করতে পারছেন না। দুই দেশের কূটনৈতিক মহল মনে করছে, জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে দুজনের সাক্ষাৎ হতেই পারে। তবে তা কূটনৈতিক পরিভাষায় ‘স্ট্রাকচার্ড ডায়ালগ’ হয়তো হবে না। সেই আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে ভারতেই।
জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সি চিন পিংও আগামী মাসে দিল্লি আসবেন। তখন মোদি–সি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে ভারত–চীন সেনা সংঘর্ষের পর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে মোদির সঙ্গে সির প্রথম দেখা ও কথা হয়েছিল গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। সেই বৈঠকের কথা ভারত অনেক দিন চেপে রেখেছিল। সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে এসেছে। বালি বৈঠকের সময়েও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও চীনা ফৌজের মুখোমুখি অবস্থান আজকের মতোই টানটান ছিল। সেনা পর্যায়ের ১৯টি বৈঠক সত্ত্বেও সেই অবস্থানের চূড়ান্ত মীমাংসা এখনো হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ব্রিকসের আসরে মোদি–সির সম্ভাব্য বৈঠকের যৌক্তিকতা নিয়েও সোমবার প্রশ্ন ওঠে। পররাষ্ট্রসচিব সেই প্রশ্নও সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছেন। পূর্ব লাদাখ নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি পুরোনো প্রশ্ন নতুন করে তুলেছেন। রাহুল এই মুহূর্তে লাদাখ সফর করছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, লাদাখের স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে জানিয়েছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চীনা ফৌজ ভারতের জমিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে। পশুদের সেই স্বচ্ছন্দ বিচরণভূমিতে স্থানীয় মানুষ অনেক দিন ধরেই যেতে পারছেন না।
বিনয় কোয়াত্রা সোমবার এড়িয়ে যান বাংলাদেশকে ব্রিকসের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবসংক্রান্ত এক প্রশ্নও। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা ভারত কীভাবে দেখছে, তার জবাবও তিনি দেননি। বাংলাদেশের আসন্ন সংসদীয় নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ভারত ও বাংলাদেশে বিরাট আলোচনার।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা, বাংলাদেশকে ব্রিকসের সদস্য করাতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ চীনের। সংগঠনে চীন এভাবে তার অনুগামী ও কাছের দেশগুলোকে কাছে টেনে দল ভারী করুক, এটা ভারত চাইছে না। তাই ব্রিকসের বহর বৃদ্ধি ও বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ভারত সতর্ক পা ফেলছে।
মোদির সঙ্গে হাসিনার জোহানেসবার্গে বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষেও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সি–হাসিনার সম্ভাব্য বৈঠক নিয়েও নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হচ্ছে না। কোনো কোনো মহলের ধারণা, দক্ষিণ আফ্রিকায় সি–হাসিনা বৈঠক হলে ভারসাম্য রক্ষায় কেউ কেউ সেখানে মোদি–হাসিনার বৈঠক দেখতে আগ্রহী।
ভারত ও বাংলাদেশ—দুই দেশেরই সংসদীয় নির্বাচন আগামী বছর। এর আগে সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রী শেষবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেবেন। বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ আগ্রহ এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই বিশ্বস্ত প্রতিবেশীর সম্পর্ক এই মুহূর্তে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। সে কারণে বেড়ে গেছে চূড়ান্ত রাজনৈতিক তৎপরতা।