ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে একত্র হয়েছেন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের নেতারা। জোটের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা। ব্রিকসের নেতাদের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় ‘শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দায়ও সরব হয়েছে ১১ দেশের এই জোট।
গতকাল রোববার ছিল সম্মেলনের প্রথম দিন। এবার জোটের ১৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রিকসের ১১ সদস্যদেশের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ইথিওপিয়া। এই দেশগুলোয় বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করে এবং বৈশ্বিক উৎপাদনে ৪০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।
রোববার সম্মেলনের বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় দ্রুত, স্থায়ী ও শর্তহীন একটি যুদ্ধবিরতির জন্য সব পক্ষকে সদিচ্ছার সঙ্গে আরও আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে সদস্যদেশগুলো। একই সঙ্গে গাজা এবং ফিলিস্তিনের দখল করা অন্য সব এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। কাতারের রাজধানী দোহায় বর্তমানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ব্রিকস সম্মেলনে ইরানের প্রতি প্রতীকী সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক হামলার নিন্দাও জানানো হয়েছে। ১৩ জুন ইরানে হঠাৎ হামলা চালায় ইসরায়েল। এর পর থেকে টানা ১২ দিন দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। পরে ২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর দুই দিন বাদে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়।
শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়েও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে ব্রিকস। জোটের বিবৃতিতে এই শুল্ককে ‘অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গত এপ্রিলে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সেই শুল্ক স্থগিত করা হয়। শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন দেশকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাম্প।
ব্রিকস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বৈশ্বিক বাণিজ্যের নিয়মকে লঙ্ঘন করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য আরও হ্রাস পাওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। প্রভাবিত করেছে বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন শুল্কের কারণে মেক্সিকো থেকে উপসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।
এরই মধ্যে ব্রিকসের ‘আমেরিকাবিরোধী নীতির’ সঙ্গে যেসব দেশ নিজেদের জোটটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। রোববার মার্কিন শুল্ক নিয়ে ব্রিকসের প্রতিক্রিয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দেন দিনি। তবে ‘আমেরিকাবিরোধী নীতি’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই হুমকির পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং আজ সোমবার বলেছেন, ‘শুল্ক আরোপের বিষয়ে চীন বারবার নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। বেইজিংয়ের অবস্থান হলো বাণিজ্য ও শুল্কের লড়াইয়ে কেউ বিজয়ী হবে না। সংরক্ষণবাদ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায় না।’
এএফপি
রিও ডি জেনিরো