আসলে আবেদন ছাড়া কিছুই করেনি বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা ব্রিকসের নতুন সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে বিশেষভাবে উৎসাহী ছিলেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ভিন্ন এক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্রিকসের সদস্যপদ পেলে তা বাংলাদেশের জন্য নতুন এক মাত্রা যোগ করত বলেই ধারণা করা হচ্ছিল।
তবে আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য ছয়টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পাওয়া দেশ ছয়টি হলো আর্জেন্টিনা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ব্রিকসে দেশ ছয়টির সদস্যপদ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি কার্যকর হবে।
গত জুন মাসে জেনেভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগদানের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। ওই বৈঠকের পর, অর্থাৎ ১৪ জুনের পরই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার ফাঁকে দুই শীর্ষ নেতা বৈঠক করেছিলেন।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের কোনো ফোরাম বা জোটে যোগ দিতে শুধু আবেদন করে বসে থাকলেই সদস্যপদ পাওয়ার আশাটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ, কোনো জোটে যোগ দিতে হলে সদস্য দেশগুলোর নতুন কোনো দেশকে যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হয়। ফলে ওই সব দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি সেসব দেশে বিশেষ দূত পাঠানোর মতো প্রয়াস চালাতে হয়। জুনে ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করা ছাড়া এসব কিছুই বাংলাদেশ করেনি।
অন্য একটি সূত্রের দাবি, ব্রিকসের নতুন সদস্যপদের মানদণ্ড কী হবে, সেটা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি আছে। এমন তথ্য জানার পর বাংলাদেশও ব্রিকসের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হাল ছেড়ে দিয়েছিল। নতুন করে ছয় দেশকে ব্রিকসে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে জোটের নতুন সদস্যপদের মানদণ্ড সম্পর্কে বাংলাদেশ যথাযথভাবে অবহিত ছিল না কিংবা অবহিত হওয়ার চেষ্টা করেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতেই নতুন সদস্যপদ ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ দেশের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় সেটি ঘোষণা করা হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে অধিবেশন শুরুর আগেই পাঁচ দেশের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। ফলে নির্ধারিত সময়ের অধিবেশন বৃহস্পতিবার বেশ কিছুক্ষণ পর শুরু হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ১৭ আগস্ট তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, গত জুনে জেনেভায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রিকসে যাওয়ার জন্য। তখন ধারণা ছিল, তারা নতুন কিছু দেশকে ব্রিকসের সদস্য করবে। তবে এটা ব্রিকসের সদস্য পাঁচ দেশের ওপর নির্ভর করে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে যে বিতর্ক (ডিবেট) হচ্ছে, সেটি হচ্ছে, তিনটি দেশ চাইছে নতুন সদস্য নিতে। এ ছাড়া ভারত ও ব্রাজিল বলছে, নেওয়ার আগে নতুন নিয়ম–কানুন তৈরি করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তখন বলেছিলেন, তাঁরা চারটি দেশকে নিতে চান। আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোন কোন দেশ? তখন তিনি জানিয়েছিলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ।’
তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর এই বক্তব্য সঠিক হয়নি।
শুরুতে এর নাম ছিল ব্রিক। অর্থাৎ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। ধারণাটি দিয়েছিলেন বিনিয়োগ ব্যাংক দ্য গোল্ডম্যান সাচের অর্থনীতিবিদ জিম ও নেইল। তিনি ২০০১ সালের নভেম্বরে এক রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছিলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ এই চারটি দেশই অর্থনীতিতে প্রাধান্য দেখাবে। কেননা চার দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল, তাদের শ্রম সস্তা, জনমিতি অনুকূলে এবং ব্যবহার করার মতো প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। ২০১০ সালে ব্রিকের সঙ্গে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে এর নাম হয় ব্রিকস।
ব্রিকসে একটি জোট করার উদ্যোগ ছিল আসলে রাশিয়ার। ২০০৬ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথম জোট গড়ার আগ্রহের কথা জানান। ২০০৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালের ১৬ জুন, রাশিয়ায়।