ব্রাজিলে বজ্রপাতে ফুটবলারের মৃত্যু

0
120
ব্রাজিলের অপেশাদার ফুটবলে ম্যাচের মধ্যে বজ্রপাতে মারা গেছেন কাই হেনরিক, ছবি: এক্স

বজ্রপাতে মারা গেছেন কাই হেনরিক নামে ২১ বছর বয়সী এক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। আহত হয়েছেন আরও ৬ ফুটবলার। এই ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের পারানা রাজ্যে সান্তো আন্তোনিও দা প্লাতিনা শহরে। নিহত ও আহত ফুটবলাররা খেলছিলেন অপেশাদার একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে। সবাইকে সান আন্তোনিওর মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও কাইও হেনরিককে বাঁচানো যায়নি

পারানা শহরের হোসে এলুতেরিও স্টেডিয়ামে এই ঘটনা ঘটেছে গত রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে, ইউনিদোস দে সান্তো আন্তোনিও দা প্লাতিনা ও ইউনাইও জাপিরেনসের মধ্যকার ম্যাচে। আঞ্চলিক অ্যামেচার ফুটবল কাপের প্রথম পর্বের ম্যাচ ছিল এটি।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে বজ্রপাতের সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বজ্রপাতের কয়েক মিনিট পরের মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেছিলেন এক দর্শক। সেখানে দেখা যায় জাপিরেনস দলের খেলোয়াড়েরা মাঠেই শুয়ে পড়েছেন ও সাহায্য নিচ্ছেন। গ্লোবোর প্রতিবেদনে প্রকাশ করা ভিডিওটি সেই সমর্থকের কি না, তা জানা যায়নি। তবে প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন খেলোয়াড় মাঠে পড়ে আছেন এবং তাঁদের ধরাধরি করে মাঠের বাইরে নেওয়া হচ্ছে।

সান্তো আন্তোনিও দা প্লাতিনা মিউনিসিপ্যাল ক্রীড়া পরিচালক মার্কোস নোভেলি ফেরেইরা এ নিয়ে বলেছেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে মাঠ খেলার মতো অবস্থায় ছিল। আঁধার হয়ে এসেছিল চারপাশ, কিন্তু বজ্রপাতের সময় চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠেছিল। মনে হয়েছিল এটা (বজ্রপাত) অন্য কোথাও হবে, কিন্তু বজ্রপাতে প্রাণঘাতী ব্যাপার ঘটে গেল।’ ঘটনার মুহূর্তটাও বর্ণনা করেছেন তিনি, ‘আমরা আলোর আভা দেখতে পেয়েছিলাম…খেলোয়াড়েরা তখন মাঠে খেলছিলেন, বজ্রপাত সরাসরি একজনের ওপর পড়েছে।’

মার্কোস নোভেলি আরও জানিয়েছেন, স্টেডিয়ামে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। ম্যাচটি দেখতে আসা লোকজন কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিজেদের গাড়িতে করে মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকিরা ব্রাজিলের জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের আসার অপেক্ষায় ছিলেন। ইউনাইও জাপিরেনস পারানা রাজ্যেরই জাপিরা শহরের দল। সেখানকার নগর কর্তৃপক্ষ এবং ক্লাব কাইও হেনরিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

খেলাধুলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বিরল। তবে বজ্রপাতেই এর চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে এবং সেটাও এই ফুটবলেই। গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য কাসাইয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বেনা শাদি ও বাসাঙ্গা। সেই ম্যাচে বজ্রপাতে বেনা শাদি দলের ১১ জন খেলোয়াড়ই মারা গিয়েছিলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বাসাঙ্গার খেলোয়াড়েরা মাঠে থাকলেও তাঁদের গায়ে বজ্রের আঁচড়টি পর্যন্ত লাগেনি! এ ঘটনার পর দুই দলের সমর্থকেরা একে–অপরের বিরুদ্ধে ডাকিনীবিদ্যা চর্চার অভিযোগ তুলেছিল।

কিনশাসার ‘লা আভেনির’ সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান, ‘ফুটবল ম্যাচে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে থাকা ১১ জন তরুণ বজ্রপাতে মারা গেছেন।’ অন্য ৩০ জনের শরীর পুড়ে গেলেও বাসাঙ্গার খেলোয়াড়দের সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাসাঙ্গার খেলোয়াড়েরা অলৌকিকভাবে এই বিপর্যয়েও অক্ষত ছিলেন।’

ডাকিনীবিদ্যা চর্চার অভিযোগ নিয়েও প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘ফুটবলে নানা রকম কুসংস্কারের প্রচলন থাকায় বজ্রপাত এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছিল।’

গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছে, বেনা শাদির সেই ঘটনার কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে বজ্রপাতে স্থানীয় দলের পাঁচ খেলোয়াড় আহত হয়েছিলেন। এই তথ্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইনডিপেনডেন্ট’ ১৯৯৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করলেও গার্ডিয়ানের দাবি অন্য রকম।

সংবাদমাধ্যমটিতে তখন প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়, ‘মোরোকো সোয়ালোসের দুজন খেলোয়াড়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে প্রতিপক্ষ দলের কোচ জোমো কসমস জানিয়েছেন, সোয়ালোসের কিছু খেলোয়াড় চোট পাওয়ার ভান করেছেন।’ ম্যাচ শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগে সোয়ালোস ২–০ গোলে এগিয়ে থাকতে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছিল এবং ম্যাচটি পরে বাতিল করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.