ব্রাজিলকে চার গোলে উড়িয়ে দিল মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা

0
11
ব্রাজিল

শুধু লাতিন আমেরিকাই নয়, পুরো বিশ্ব ফুটবলেই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা বিরাজ করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ ঘিরে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের খেলা হলে পুরো ফুটবল বিশ্বই যেন ভাগ হয়ে যায় দুই ভাগে।

বুধবার (২৬ মার্চ) এমনই এক ম্যাচ ছিল বুয়েনস আয়ার্সে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সুবিধাজনক স্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে পূর্ণশক্তির দল নিয়েই প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে গিয়েছিল সেলেকাওরা। গোলকিপিংয়ে যদিও অনুপস্থিত ছিলেন দরিভালের প্রথম দুই পছন্দ অ্যালিসন বেকার ও এডারসন। অপরদিকে বিশ্বকাপ অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই আছে আলবিসেলেস্তারা। দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিকে ছাড়াই এদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সামলাতে নেমেছিল লিওনেল স্ক্যালোনির দল; যেখানে সফলও হয়েছেন তারা।

শুধু সফলই নয়, ঘরের মাঠে চার গোল করে ব্রাজিলকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা। বিপরীতে হজম করেছে মাত্র এক গোল।

৯০ মিনিটের খেলায় সেলেকাওদের মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগকে এক কথায় নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন আলভারেজ-ফার্নান্দেজ-অ্যালিস্টাররা। দুর্দান্ত আর্জেন্টাইন রক্ষণের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছে রদ্রিগো-ভিনিসিউস-রাফিনহা ত্রয়ীও।

পুরো ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলমুখে স্ক্যালোনির শিষ্যরা যেখানে শট নিয়েছে ৭টি, সেখানে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে একমাত্র ম্যাথিয়াস কুনহা একটিমাত্র শট নিতে পেরেছেন আর্জেনটাইন গোলমুখে; অবশ্য ওই শটে আলবিসেলেস্তা গোলরক্ষক মার্টিনেজ পরাস্ত হয়েছেন ঠিকই। পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার গোলবারের দিকে আরও মাত্র দুটি শট গেছে ব্রাজিলের দিক থেকে। বল দখলের লড়াইয়েও বেশ খানিকটা পিছিয়েই ছিল দরিভাল শিষ্যরা। এমনকি ৯০ মিনিটে একটা কর্ণারও আদায় করতে পারেনি ব্রাজিলের তারাভরা আক্রমণভাগ।

যেমন উত্তেজনা নিয়ে শুরু হয়েছিল ম্যাচ, তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়নি ম্যাচে। ফলাফল অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রথমার্ধেই। ম্যাচ শুরুর চার মিনিট না যেতেই ব্রাজিলিয়ান রক্ষণে প্রথম আঘাত হানেন আর্জেন্টিনার তরুণ তুর্কি জুলিয়ান আলভারেজ। ডি পলের পাস ধরে বামপ্রান্তে আক্রমণে যান নিকোলাস টাগলিয়াফিকো। তার দারুণ পাস খুঁজে নেয় থিয়েগো আলমাদাকে। ছন্দে থাকা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে বল যায় আলভারেজের পায়ে। দুই ডিফেন্ডারের মাঝে বল পেয়ে গোল করতে কোনো সমস্যাই হয়নি তার।

এর ৮ মিনিট বাদেই আরেকটি আঘাত হানেন এনজো ফার্নান্দেজ। ব্রাজিলের অর্ধে একাই অনেকটা পথ পার করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। সেখান থেকে আলভারেজের পা ঘুরে বল যায় নাহুয়েল মলিনার কাছে। ডানপ্রান্তের ক্রস থেকে সহজ ফিনিশ করেন এনজো ফার্নান্দেজ।

জেতার মিশনে মাঠে নেমে ১২ মিনিটেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে সেলেকাওরা। অবশ্য প্রথমার্ধের অনেকটা সময় বাকি থাকতেই ব্রাজিলের খেলায় ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয় ম্যাথিয়াস কুনহার গোলে। ম্যাচের ২৬তম মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো বল পায়ে পজিশন হারান কুনহার প্রেসিংয়ের কাছে। সেখান থেকে ঠান্ডা মাথায় ফিনিশিং করেন ইংলিশ ক্লাব উলভসে দারুণ সময় কাটানো এ ফরোয়ার্ড।

এটাই শেষ। পুরো খেলায় সেই অর্থে আর কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি দরিভালের শিষ্যরা, উল্টো প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই খেয়ে বসে আরেকটা গোল। এবার স্কোরশিটে নাম লেখান অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে কর্নার থেকে ফেরত আসা বলে মাপা এক চিপ করেন এনজো ফার্নান্দেজ। ৬ গজের ছোট বক্সের সামনে তাতে আলতো পা ছুঁয়ে ব্যবধান ৩-১ করেন লিভারপুল স্টার ম্যাক অ্যালিস্টার।

এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের ক্ষতটা আরেকটু বাড়িয়ে দেন বদলি নামা গুইলিয়ানো সিমিওনে; ৬৮ মিনিটে আলমাডার বদলি হিসেবে নামার পর মাত্র তিন মিনিট সময় নেন স্কোরশিটে নাম লেখাতে।

ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই নামার আগেই এদিন বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিতের খবর পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বলিভিয়া ও উরুগুয়ের মধ্যকার ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হওয়ায় আগেভাগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয়ে গেছে লিওনেল স্ক্যালোনির দলের। আর এই ম্যাচ শেষে কনমেবল অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের টেবিলে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এখন আর্জেন্টিনাই।

অন্যদিকে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চারে অবস্থান করছে ব্রাজিল। তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে পাঁচে থাকা প্যারাগুয়ে এবং ছয়ে থাকা কলম্বিয়া। যদিও এখইন পর্যন্ত কনমেবল অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই থেকে সেলেকাওদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুব কম, তবুও দলের বর্তমান ফর্ম বেশ অস্বস্তিতেই ফেলেছে কোচ, ম্যানেজমেন্ট ও সমর্থকদের।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.