সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হয়েছে ব্যাংকিং সেবা। চেকে লেনদেন থেকে এটিএম–যুগের পর এখন ব্যাংকগুলো অ্যাপসভিত্তিক লেনদেনে ঝুঁকেছে। এতে ব্যাংকিং লেনদেনে যেমন গতি সঞ্চার হয়েছে, তেমনি সহজ হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। এটিএম সেবা থেকে শুরু করে অ্যাপভিত্তিক লেনদেন সহজ করে দিয়েছে গ্রাহকের দৈনন্দিন ব্যাংকিং সেবা। অ্যাপভিত্তিক আধুনিক এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন হয়েছে ২৯ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। জানুয়ারি মাসে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩৩ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, একক মাস হিসেবে ব্যাংকের অ্যাপসভিত্তিক সর্বোচ্চ লেনদেনের এটিই রেকর্ড।
গত চার বছরে ব্যাংকের অ্যাপসভিত্তিক লেনদেনে গ্রাহক বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের অ্যাপসভিত্তিক লেনদেনের গ্রাহক ছিল ২০ লাখ ৪৯ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এসে গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ লাখ ৬৯ হাজারে।
এ পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিজিটাল সেবার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে বোঝা গেছে করোনাভাইরাস আসার পর। ডিজিটাল ব্যবস্থায় কাজ করার ফলে এখন ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রযুক্তিনির্ভর সেবার ব্যাপারে গ্রাহকের আগ্রহও বেড়েছে। তাতে দিন দিন অ্যাপসভিত্তিক ব্যাংকিং সম্প্রসারণ হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দেশে যেসব ব্যাংক অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন করছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়ে থাকে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, সোনালী ব্যাংকের সোনালী ই-সেবা, ইস্টার্ণ ব্যাংকের স্কাই ইবিএল ও সিটি ব্যাংকের সিটি টাচের মাধ্যমে।
বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন মিলে মোট অ্যাপসভিত্তিক গ্রাহকের ৬০ শতাংশের মতো দখল করে আছে। গুগল প্লে স্টোরের তথ্য বলছে, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ ডাউনলোড করা হয়েছে ১০ লাখের বেশি। গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটির রেটিং ৪ দশমিক ৪। অ্যাপটিতে ২৪ হাজারের মতো গ্রাহক তাঁদের রিভিউ বা ব্যবহারের ওপর মন্তব্য করেছেন।
ব্যাংকের অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের সেবাটির অবস্থাও একই। নেক্সাস পে নামের অ্যাপটিও ডাউনলোড করা হয়েছে ১০ লাখের বেশি। গুগল প্লে স্টোরে এ অ্যাপের রেটিংও ৪ দশমিক ৪। তবে অ্যাপটি নিয়ে মন্তব্যকারীর সংখ্যা সেলফিনের তুলনায় বেশি। ৬৪ হাজারের বেশি লোক এই অ্যাপ নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরিসূত্রে ব্যাংকে হিসাব খুলেছি। তাতে এখন আর আগের মতো প্রতি মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে ব্যাংকে যেতে হচ্ছে না। অ্যাপ থেকে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারি। এতে সময় যেমন বাঁচছে, তেমনি দ্রুত টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।’ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার ফলে জীবন এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে শুধু ব্যাংক নয়, বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এমএফএসের মাধ্যমে। এই লেনদেনের অধিকাংশ হয়ে থাকে অ্যাপসের মাধ্যমে।