এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পুরান ঢাকার বকশীবাজার, চাঁদপুর আর মুন্সিগঞ্জ থেকে মনসুর আহম্মেদের দুই নাতি-নাতনিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে চকবাজার থানার পুলিশ। তাঁরা হলেন মনসুর আহম্মেদের নাতনি আনিকা তাবাসসুম (২৩), নাতি শাহাদাত মুবিন (২০), তাবাসসুমের বন্ধু রাজু (২২), রাজুর ভাই রায়হান (২০) ও তাঁদের পরিচিত আবু সাঈদ (২০)।
আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে একটি সিরিঞ্জ জব্দ করা হয়। এই সিরিঞ্জের সূত্র ধরে হত্যা মামলার তদন্তে মোড় নেয়। শুরুতে ডাকাতিসহ খুনের মামলা হলেও পরে পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় খুনের প্রমাণ পাই আমরা। পরিকল্পনায় ছিলেন আনিকা ও শাহাদাত।’
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আনিকা রাজধানীর একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে পড়েন। তাঁর পরিকল্পনায় শাহাদাতসহ অন্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই বাসায় ঢোকেন। বাইরে ঘুরতে যাওয়ার টাকা জোগাতে তাঁরা ডাকাতির পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বিজয় বলেন, এক মাস আগে মনসুরকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বাসা ফাঁকা পাওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন শাহাদাত ও আনিকা। ১৭ নভেম্বর রাতে পরিবারের সদস্যরা একটি বিয়ের দাওয়াতে যান। আনিকাও সেখানে যান। কমিউনিটি সেন্টার থেকেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজটি তদারকি করেন তিনি। বাড়ির আশপাশে অবস্থান নিয়ে আনিকার বন্ধু রাজু বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। বাসায় ঢোকেন আনিকার ভাই শাহাদাত, রাজুর ভাই রায়হান ও সাঈদ। তাঁরা মনসুরকে অচেতন করতে ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনজন মিলে তাঁকে মারধর করলে একপর্যায়ে তিনি মারা যান। এরপর তাঁরা বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান। ১৯ নভেম্বর মনসুরের ছেলে আসগর আহম্মেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ডাকাতিসহ হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে, মনসুর হত্যায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা জড়িত।
মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, রায়হান ও সাঈদ মিলে মনসুরকে মারধর করে ঘরে থাকা ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান। টাকা খুঁজে বের করে দেন শাহাদাত। লুটের ৬২ হাজার টাকা আনিকার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এ হত্যাকাণ্ড বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
পুলিশ বলছে, আনিকা ও শাহাদাত হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারলেও তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ডিজিটাল ফরেনসিক, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কার কী দায় রয়েছে, তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেন তাঁরা।