পরীক্ষাতেই অংশ নেননি অথচ পাশ করিয়ে দিয়েছেন শিক্ষক। পাশ করা শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেত্রী। ঘটনাটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে ক্যাম্পাস। এর মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর রুহুল আমিনকে অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পাশ করা ওই শিক্ষার্থী হলেন, সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সামনের সারিতে ছিলেন ঐশী। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক তিনি। গেলো বছর ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় গণিত বিভাগের মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের একটি মিডটার্ম পরীক্ষা। পড়াতেন বিভাগের অধ্যপক ড. রুহুল আমীন। কিন্তু ওই পরীক্ষায় অংশ-ই নেয়নি ছাত্রলীগ নেত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন। অথচ ফলাফলে দেখানো হয়েছে উত্তীর্ণ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সহপাঠীরা।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সামনের সাড়িতে ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী ঐশী। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পরের দিন থেকে তাকে ক্যাম্পাস কিংবা বিভাগে দেখা যায়নি। পরীক্ষায়ও উপস্থিত হয়নি। ক্লাসের উপস্থিতি খাতায়ও তার নাম নেই। তাহলে কীভাবে তাকে পাশ করিয়ে দিলেন শিক্ষক। এটা আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে, ভাবতেই পারছি না। আমরা চাই কেনো এ ঘটনা ঘটলো? যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদি না হয়, তাহলে বুঝবো বর্তমান প্রশাসনেও ফ্যাসিবাদের দোসর আছে।
পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও কীভাবে শিক্ষার্থী পাশ করলেন-সে বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ওঠা শিক্ষক ড. রুহুল আমিন। তবে তিনি জানান, যেহেতু এ ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়েছে। আমি তদন্ত কমিটিকে বিস্তারিত বলবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুণ অর রশিদ জানান, পরীক্ষা না দিয়েও এক শিক্ষার্থীকে পাশ করে দেয়ার ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তানজিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হান্নান মিয়া এবং সদস্য করা হয়েছে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক এই তদন্ত কমিটিকে অবিলম্বে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়েন উপাচার্য ড. এম শওকাত আলী জানান, আমি মনে করি এটা খুব সেনসেটিভ ইস্যু। আমি অবাক হয়েছি। কীভাবে এটা সম্ভব। কেমন করে এটা হলো। সেকারণে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়ে বলেছি দ্রুত প্রতিবেদন দিতে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির পাশাপাশি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞান বিভাগের সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সার্বিক ব্যাপারে কথা বলতে ঐশী ইসলাম পলাতক থাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর খোলা থাকলেও তিনি রিসিভ করেন নি।