সংবাদমাধ্যমের ওপর কাজী সালাউদ্দিনের ক্ষোভটা পুরেনো। ভরা সংবাদ সম্মেলন কিংবা অগোচরে প্রায় মিডিয়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায় তাকে। বাফুফে সভাপতির দাবি, মিডিয়ায় বদনামের কারণে নাকি ফুটবলে বিনিয়োগ করতে আসে না স্পন্সররা। অতীতের নেতিবাচক মন্তব্য করলেও সেগুলো ছিল কিছুটা সহনীয়।
তবে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা সভ্যতা-ভব্যতার সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, ‘জার্নালিস্টরা এখানে ঢুকতে গেলে তাদের আমার এখানে ফটো দিতে হবে তাদের বাপ-মার। আরেকটা কন্ডিশন হলো, তার বাপের ফটো পাঠাবে জুতা পরা। ঠিক আছে (হাসি), এটা হতে হবে ম্যান্ডেটরি (আবশ্যিক)। বাপের জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।’
গণমাধ্যমের ওপর যে ভীষণ রাগ, সেটাই যেন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার কথায়। সংবাদকর্মীদের নিয়ে তার এই অপমানজনক মন্তব্যে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা ফুটবলাঙ্গন।
দরপত্রে অনিয়ম, অর্থের অপব্যবহারে গত ১৪ এপ্রিল দুই বছরের জন্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। তার আগ থেকেই দেশের ফুটবলের নানা অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। এসব সংবাদকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে প্রায়ই ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় তাকে। গতকাল বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই তার ওই বেফাঁস কথোপকথনটি রেকর্ড হয়ে যায় টেবিলের ওপরে রাখা সাংবাদিকদরে মোবাইল ফোনে। তার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কথাগুলো শ্রোতার মতো শুনে যান পাশে থাকা সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এবং আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
ফুটবল ফেডারেশনের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করায় গণমাধ্যমের ওপর সালাউদ্দিনের এই ক্ষোভ-রাগ। এই রাগের প্রকাশই তার এই বাজে মন্তব্যটি। সাংবাদিক সমাজের জন্য অপমানজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেকে।
এসব বর্ণবাদী এবং অপমানজনক মন্তব্য ফিফার দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ। তার এই মন্তব্যটি মিডিয়ার মাধ্যমে ফিফার দপ্তরে চলে গেলে হয়তো শাস্তিও পেতে পারেন বাফুফে সভাপতি। যদিও নিজের বেফাঁস মন্তব্যের জন্য এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘একটা নিউজ আমি দেখছি, যেখানে সাংবাদিকদের আঘাত করার জন্য একটা কথা বলেছি। প্রকৃত কথা হলো, আমি সাংবাদিকদের কষ্ট দেওয়ার জন্য বলিনি। আমি নাবিলের (কাজী নাবিল আহমেদ) সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে জোক করছিলাম। সেটা যে কেউ টেপ (রেকর্ড) করছিলেন, সেটা আমি জানি না। আমি এই কথায় যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, দুঃখ দিয়ে থাকি, তাহলে আমি খুবই দুঃখিত।’
তিনি এই কথাগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলেননি বলেও জানিয়েছেন, ‘আমি ক্ষমা চাই। কারণ, আমি উদ্দেশ্যমূলক কিছু বলিনি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত একটা জোক ছিল। ওখানে যে টেপ (রেকর্ড) ছিল, সেটাও আমি জানি না। কাউকে যদি কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে অবশ্যই আমি দুঃখিত।’