আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় আরও বেড়েছে। দর বাড়ার তালিকায় রয়েছে কাঁচামরিচ, রসুন, আদাসহ কয়েকটি পণ্য। তবে চাল, ডাল ও আটা-ময়দার দাম আগের মতোই রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমাগার গেটে আলুর দর বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচামরিচ ও সবজির দাম বাড়তি। গরমে মুরগি মারা যাওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। আর ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কম হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি বলে দর বেড়েছে।
গত বছরের মে মাসে বাড়তে শুরু করে আলুর দর। এরপর আমদানির আলু আসার পর পণ্যটির দর কিছুটা কমে। এবার মৌসুমেও আলুর দর তেমন কমেনি। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ‘হিমাগারের গেটে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা দরে। এরপর পরিবহন খরচ ও ঘাটতি আছে। সব হিসাবনিকাশ করে ৫৫ টাকার কমে বেচলে লাভ থাকে না।’
সরবরাহে ঘাটতির ছুতায় এক মাস ধরে কাঁচামরিচের বাজার চড়া। মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে। মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসে দর বেড়েছে দ্বিগুণের মতো।
দাম বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহখানেক আগে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এক সপ্তাহে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ টন কাঁচামরিচ আমদানিও হয়। তবে বাজারে এখনও পণ্যটির দর কমেনি।
ডিমের বাজারও চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে বেশি বেচাকেনা হয় বাদামি রঙের ডিম। খুচরায় এ ধরনের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। হালি হিসাবে (৪টি) কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।
ডিমের দর বাড়ার জন্য করপোরেটদের দায়ী করছেন ছোট খামারিরা। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বড় প্রতিষ্ঠান ও ঢাকার বড় পাইকাররা সিন্ডিকেট করে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করছে। এতে ছোট খামারিরা হুমকির মুখে পড়েছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় তেমন হেরফের দেখা যায়নি মুরগির বাজারে। ব্রয়লারের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগির প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানির অনুমতি থাকলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে কম। ফলে দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এতে দরও বাড়ছে। এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
গত সপ্তাহের মতো দেশি রসুন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় ও আমদানি করা চায়না রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১৫ দিনে আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে দেশি ও আমদানি করা প্রতি কেজি আদা ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত সপ্তাহে টমেটোর কেজি ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গতকাল তা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বাজারে নতুন কচুরমুখি এসেছ, বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তি পেঁপের বাজার। গতকাল এক কেজি পেঁপে কিনতে গুনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শসার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। পটোল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও করলা আগের মতোই প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ৬০ টাকার আশপাশের দরে।