তৃতীয় বারের মতো পেছাল ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালুর তারিখ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে কম খরচে ঢাকায় আম পরিবহনের জন্য ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালুর দিন ছিল বুধবার। কিন্তু বিশেষ এই ট্রেনের কার্যক্রম রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন নিজে উদ্বোধন করবেন বলে সেটির চালুর দিন বুধবারের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসের ২৫ তারিখ ট্রেনটি চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও আমের স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে ট্রেনটি চালুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। পরে ৭ জুন ট্রেন চালুর উদ্যোগ হিসেবে ২ জুন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু মন্ত্রী নিজে এসে ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন তাই একদিন পিছিয়ে বৃহস্পতিবার নেওয়া হয়। এদিকে আম মৌসুমের অনেক পরে ট্রেনটি চালু হওয়ায় এর সুফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে বিকেল ৪টায় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। নাচোল স্টেশনে পৌঁছাবে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, নিজামপুরে রেল স্টেশনে ৪টা ৪০ মিনিটে, আমনুরা জংশনে বিকেল ৫টায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ৬টায়, আমনুরা বাইপাস ও কাঁকানহাটে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে। এসব স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ী ও চাষিদের খরচ হবে প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৩২ পয়সা। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৭টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ৭টা ৫৩ মিনিটে সরদহ রোড, রাত ৮টা ১৫ মিনিটে আড়ানি, ট্রেনটি আব্দুলপুরে পৌঁছাবে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। মাঝে জয়দেবপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে আম বুকিং করার জন্য দাঁড়াবে। ট্রেনটি তেজগাঁও পৌঁছাবে রাত ১টা ১৫ মিনিটে। আর এসব স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ীদের গুনতে হবে ১ টাকা ১৭ পয়সা।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাড়ার নির্দিষ্ট কোন সময়সূচি প্রশাসন বেঁধে না দিলেও মে মাসের শেষ দিকে বিভিন্ন জাতের গুটি আম এবং জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই খিরসাপাত আম বাজারে ব্যাপকহারে নামতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা আম কেনা শুরু এবং জেলার বাইরে পাঠানো শুরু করেছেন। তাই ট্রেনটি অন্তত ১ জুন থেকে চালু করলেও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবগঞ্জ উপজেলার এক অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার জানান, তিনি গত ২ জুন ও ৩ জুন একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ৯ মন আম পাঠিয়েছেন। আমের মৌসুমের শুরুতেই সবাই আমের জন্য তাগাদা দেওয়ায় এবং মৌসুমের শেষের দিকে আমের দাম বেড়ে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই আমগুলো কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ট্রেনটি আগে চালু হলে কম খরচে তার মতো অনেকেই আম পাঠাতে পারত। বিলম্বে ট্রেন চালুর ফলে সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি থেকে রাজস্ব ঠিকমতো পেলে সরকার যেমন লাভবান হবে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে। কিন্তু প্রতিবছরই ট্রেনটি সময় মতো চালু না হওয়ায় লোকসানে পড়ছে। গতবছর চালুর ৭ দিনের মাথায় লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনটি। এ বছরও ট্রেনটি বিলম্বে চালু হওয়ায় জেলার শতকরা ২০ ভাগ আম ইতোমধ্যেই পরিবহন সম্পন্ন হয়ে গেছে।
গত বছরও ৩ দফা সময় পরিবর্তন করেও সময় সূচি পরিবর্তন করা হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানীগামী ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন। ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত চলা ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২ কেজি। এতে রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৪৫৮ টাকা। দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। সেই বছর আম পরিবহন করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৩ কেজি। রাজস্ব আদায় হয় ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা। সর্বশেষ গত বছর ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ কেজি আম পরিবহন করা হয়। এতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় হয়েছিল।