বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে পড়ে ‘বিষাক্ত গ্যাস’, কারখানার ছাদের দরজা ছিল তালাবন্ধ

0
22
আগুনে নিহত ব্যক্তিদের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় কেন এত মৃত্যু হলো, প্রাথমিকভাবে তার কয়েকটি কারণ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পাঁচ তলা একটি পোশাক কারখানা এবং এর লাগোয়া একটি রাসায়নিকের গুদামে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আগুন লাগে
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পাঁচ তলা একটি পোশাক কারখানা এবং এর লাগোয়া একটি রাসায়নিকের গুদামে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আগুন লাগেছবি: সাজিদ হোসেন

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘আগুন খুব দ্রুত “ডেভেলপ স্টেজ” বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’ এ ছাড়া যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। এ ছাড়া পোশাক কারখানার ভবন ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

কারখানা ভবন ও রাসায়নিকের গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানা ভবনে তল্লাশি অভিযান চলার মধ্যে আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

পোশাক কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারি। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে
পোশাক কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারি। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতেছবি: সাজিদ হোসেন

এর আগে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কে ওই কারখানা ভবন এবং তার উল্টো দিকে রাস্তার অপর পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে।

পোশাক কারখানা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। সেখানে এখনো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক ছিল।

ছবি তুলে ধরে খোঁজ করছেন স্বজনেরা। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে
ছবি তুলে ধরে খোঁজ করছেন স্বজনেরা। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে

ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিনতলায় বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যাঁরা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তাঁরা রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।

পোশাক কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় নিখোঁজ একজনের স্বজনের আহাজারি। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে
পোশাক কারখানায় আগুনে হতাহতের ঘটনায় নিখোঁজ একজনের স্বজনের আহাজারি। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে

তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামের ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

পানি ছিটিয়ে রাসায়নিক গুদামের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে
পানি ছিটিয়ে রাসায়নিক গুদামের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে

ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচতলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।

ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামটির কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.