সব পূজামণ্ডপের বাতাসেই এখন বিষাদের ছায়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে মন খারাপের দিন। ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি-বাজনা, রাত্রি উজ্জ্বল করা আরতি ও পূজারি-ভক্তদের পূজা-অর্চনায় কেবলই মা দুর্গার বিদায়ের আয়োজন। গতকাল সোমবার মন্দিরে মন্দিরে বাজে বিদায়ের সুর। আজ মঙ্গলবার শুভ বিজয়া দশমী। সনাতনী সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবের শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নেবেন মা। অশ্রুসজল চোখে বিসর্জন দেওয়া হবে প্রতিমা। এতে ভেঙে যাবে পাঁচ দিনের সার্বজনীন মিলনমেলা।
আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দশমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দেওয়া হবে। এর পর সারাদেশে স্থানীয় আয়োজন ও সুবিধামতো সময়ে বিজয়ার শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। সর্বত্র বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন।
বিসর্জনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে বিকেল ৩টায়। এর আগে রাজধানীর ২৪৬টি পূজামণ্ডপ থেকে ভক্ত-পূজারিরা এসে জড়ো হবেন পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিতভাবে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এর পর সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর জলে একে একে বিসর্জন দেওয়া হবে প্রতিমা।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ। শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সকালে বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে দুপুর ১২টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান আয়োজিত হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে রয়েছে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, ভোগ আরতিসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
গতকাল ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী। মা দেবী দুর্গাকে বিদায়ের আয়োজনে বিষণ্ন মন নিয়েই উৎসবে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দিনটির প্রধান আকর্ষণ ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা ও রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠেছিলেন নানা ঢঙে, আরতি নিবেদনে। সেই সঙ্গে ছিল দিনভর পুরোহিতদের চণ্ডীপাঠ। মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের কীর্তন-বন্দনা। সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি করা হয়।
মহানবমীর দিনেও আগের দিনের মতো রাজধানীসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপে মানুষের ঢল নেমেছিল। মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ভিড় ছিল উপচে পড়া। হাজার হাজার ভক্ত, পূজারি এবং দর্শনার্থী মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেন। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথাও কোথাও মণ্ডপসংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বিকেল থেকেই। এ কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাতে যানজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যাওয়ায় পূজারিদের পড়তে হয় ভোগান্তির মধ্যে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিশেষ নিরাপত্তা দেবে র্যাব
আজ প্রতিমা বিসর্জনে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে র্যাব। এ তথ্য জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেছেন, বিশেষ নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে র্যাব।
গতকাল গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।