মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাপকাঠিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। এর পেছনে অর্থাৎ দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা চার দেশ হলো যথাক্রমে চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় এই পাঁচ দেশই অনুমিতভাবে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অর্থনীতির এই তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকার ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে থাকা দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও ব্রাজিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ফোর্বস ম্যাগাজিন বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোর তালিকাটি তৈরি করেছে। এটি করা হয়েছে জিডিপির মানদণ্ডে। কারণ, জিডিপির মাধ্যমে একটি দেশের ইকোনমিক হেলথ বা অর্থনীতির স্বাস্থ্য কেমন, তা বোঝা যায়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, জিডিপিটা কী? তাহলে চলুন, সেটাই জেনে নিই প্রথমে। জিডিপি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যাপকতা মূল্যায়নের একটি মূল মেট্রিক বা মানদণ্ড, যা আলাদাভাবে আয় বা ব্যয় কিংবা উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করে পরিমাপ করা যায়। একটি পদ্ধতি হলো, কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওই দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত (ফিনিশড গুডস অ্যান্ড সার্ভিস) সব পণ্য ও সেবার মোট আর্থিক মূল্য বা আকারই হচ্ছে জিডিপি। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের অভ্যন্তরে ভোক্তা ব্যয়, সরকারি ব্যয়, ব্যবসায়িক ব্যয় বা নতুন বিনিয়োগ এবং নিট রপ্তানি মূল্য যোগ করেও জিডিপি নিরূপণ করা যায়।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি ২০২৩ সালের বৃহত্তম বৈশ্বিক জিডিপির তালিকা
অবস্থান | দেশ | জিডিপি (বিলিয়ন ডলারে) | মাথাপিছু জিডিপি (হাজার ডলারে) |
১. | যুক্তরাষ্ট্র | ২৬,৮৫৪ | ৮০.০৩ |
২. | চীন | ১৯,৩৭৪ | ১৩.৭২ |
৩. | জাপান | ৪,৪১০ | ৩৫.৩৯ |
৪. | জার্মানি | ৪,৩০৯ | ৫১.৩৮ |
৫. | ভারত | ৩,৭৫০ | ২.৬ |
৬. | যুক্তরাজ্য (ইউকে) | ৩,১৫৯ | ৪৬.৩১ |
৭. | ফ্রান্স | ২,৯২৪ | ৪৪.৪১ |
৮. | ইতালি | ২,১৭০ | ৩৬.৮১ |
৯. | কানাডা | ২,০৯০ | ৫২.৭২ |
১০. | ব্রাজিল | ২,০৮০ | ৯.৬৭ |
যুক্তরাষ্ট্র
ফোর্বস বলছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই ১৯৬০ থেকে চলতি ২০২৩ সাল পর্যন্ত জিডিপির আকারের দিক থেকে টানা শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। বদৌলতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির মর্যাদা পেয়ে আসছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষেবা, উত্পাদন, আর্থিক ও প্রযুক্তি ইত্যাদি। সেই দেশের ভোক্তাবাজারের আকার খুবই বড়। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার ২৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। দেশটির জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৮০ হাজার ৩০ ডলার।
চীন
বিশ্বের নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটেছে। দেশটি ১৯৬০ সালে যেখানে জিডিপির আকারে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে ছিল, সেখানে চলতি ২০২৩ সালে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চীনা অর্থনীতি প্রধানত উত্পাদন, রপ্তানি ও বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে এগোচ্ছে। চীনে রয়েছে বিশাল জনশক্তি, জোরালো সরকারি সমর্থন, অবকাঠামোগত অগ্রগতি এবং দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তাবাজার। চীনের জিডিপির আকার ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর মাথাপিছু আয় ১৩ হাজার ৭২০ ডলার।
জাপান
প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, উত্পাদন দক্ষতা ও পরিষেবা শিল্প ইত্যাদি জাপানের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এনে দিয়েছে। এ ছাড়া গাড়িশিল্পসহ ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রপাতি ও আর্থিক খাত জাপানের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানে জাপানের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার কোটি ডলার। আর জনগণের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৫ হাজার ৩৯০ ডলার।
জার্মানি
জার্মান অর্থনীতি দৃঢ়ভাবে রপ্তানিনির্ভর। প্রকৌশল, গাড়ি, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল বা ওষুধ রপ্তানির সুবাদে দেশটির অর্থনীতি অনেক বিকশিত হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশটিতে রয়েছে দক্ষ শ্রমশক্তি, শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি। জার্মানির জিডিপির আকার ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। আর জনগণের মাথাপিছু আয় ৫১ হাজার ৩৮০ ডলার।
ভারত
ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং তা দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। দেশটির অর্থনীতি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি, পরিষেবা, কৃষি ও উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ঘিরেই পরিচালিত হয়। এ ছাড়া সেই দেশের রয়েছে বিশাল এক অভ্যন্তরীণ বাজার, বৃহৎ তরুণ সম্প্রদায় এবং প্রযুক্তিগতভাবে পারদর্শী শ্রমশক্তি। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে ভারতের জিডিপির আকার ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলার এবং জনগণের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬০০ ডলার।