বিশ্বব্যাংক বলছে, কচুপাতার পানিও দায়ী; মন্ত্রী বললেন, সব পাকা ভবন হয়ে গেছে

0
144
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম আজ বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ: তথ্য বিনিময় সেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে একটি উপস্থাপনায় বিশ্বব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গ্রামে কচুপাতায় জমে থাকা পানিও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য দায়ী। এ নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, গ্রামে সব পাকা বিল্ডিং হয়ে গেছে। যেখানে পানি জমে থাকে। আজ বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ: তথ্য বিনিময় সেশন’ শীর্ষক আয়োজনে এসব বিষয় উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের প্রভাব’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ও প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার ইফফাত মাহমুদ। সেখানে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর মূল মৌসুম সাধারণত মে থেকে শুরু হয়ে জুলাই বা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয়। কিন্তু চলতি বছর ডেঙ্গুর পরিস্থিতি এপ্রিল থেকে বেড়েছে এবং তা ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে।

যেসব স্থান থেকে মশার বিস্তার হয়, তার কিছু চিত্র উপস্থাপনায় দেখান বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা ইফফাত মাহমুদ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কচুপাতার ওপর জমে থাকা পানি থেকেও মশার বিস্তার ঘটে।

এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম গ্রামে ডেঙ্গু ছড়ানো নিয়ে বলেন, গ্রামে এখন সব বিল্ডিং হয়ে গেছে। বিল্ডিংয়ের মধ্যে পানি জমে থাকে। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, কচুপাতার ওপর জমা পানি থেকেও ছড়াচ্ছে।

দেশে এডিস মশা এই মাত্রায় ছিল না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এটা বাইরে থেকে আসছে। কোনো না কোনো বাহনের মাধ্যমে আসছে। গ্রামে ছড়াচ্ছে। কারণ, বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে যেতে পারে। একটা মশা গেলেও সেটা থেকে বিস্তার হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্রামে এখন সব পাকা বিল্ডিং হংয়ে গেছে। পাকা বিল্ডিং না থাকলে এটা কম উদ্বেগের কারণ হতো।

মন্ত্রী দাবি করেন, প্রস্তুতি ও বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা বছরের শুরু থেকে মশকনিধনের জন্য প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেন। সারা বছরই তাঁরা কাজ করেন, সব চেষ্টাই করছেন। এমন কোনো পদক্ষেপ নেই, যা করেননি।

অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকেরা বলেন, সবকিছু যদি জলবায়ুর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের আবহাওয়ার পার্থক্য নেই। কিন্তু সেখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, কলকাতায় এ বছর খবরে তিনি দেখেছেন, হাজার হাজার আক্রান্ত হচ্ছে, মশারি নিয়ে মানুষ মিছিল করছে। বাংলাদেশের চেয়ে আক্রান্তের হার কলকাতায় কম নয় বলে দাবি করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন এডিস মশার জীবনচক্রের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ডেঙ্গুর বিস্তারের কিছু কারণ উল্লেখ করে তারা বলেছে, বৃষ্টিপাত যদি ২০০ থেকে ৮০০ মিলিমিটার হয়, তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে এবং আর্দ্রতা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হলে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।

বিশ্বব্যাংক তাদের উপস্থাপনায় বলেছে, চলতি বছর যে মাসেই বৃষ্টিপাত বেশি ছিল, সে মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি ছিল। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সিলেট ও চট্টগ্রামেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। বর্তমানে যে আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে আরও কয়েক মাস ডেঙ্গু থাকবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেকে, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ফারজানা মান্নান ও অতিরিক্ত সচিব মালয় চৌধুরী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.