বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। তেল সরবরাহে বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কায় এ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ব্রেন্ট ক্রুড তেলের ডাম ১ দশমিক ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছেছে। মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) অপরিশোধিত তেল ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ব্যারেল প্রায় ৭১ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া মঙ্গলবারের লেনদেনে উভয় অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্কের দাম ৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়।
ফিলিপ নোভার সিনিয়র মার্কেট বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেভা মতে, ইরান ইসরায়েলের দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর, মধ্যপ্রাচ্যে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এতেই বাজার উচ্চতায় পৌঁছায়।
মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ইরান বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। শিয়া প্রধান দেশটি তেল উৎপাদনকারী দেশের সংস্থা ওপেকের তৃতীয় বৃহত্তম সদস্য। ইরান বিশ্ব তেল উৎপাদনের প্রায় ৪ শতাংশ জোগান দেয়।
আরেকটি শঙ্কার স্থান হরমুজ প্রণালি। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বাড়লে এ পথের শিপিং কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে। হিসেব মতে ওমান ও ইরানের মধ্যে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল পরিবহন করা হয়ে থাকে।
তবে তেলের দাম নিয়ে আলোচনা হতে পারে ওপেকে। বুধবার বৈঠক করবে সংগঠনটির একটি প্যানেল। যদিও এই বৈঠক থেকে কোনো নীতিগত পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।
ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের একটি পত্রে বলা হয়েছে, যুদ্ধের টানাপড়েনে যদি ইরানের তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, তবে সৌদি আরব উৎপাদন বাড়াবে কিনা তা নিশ্চিত না।
গত কয়েকদিন ধরে ইসরাইল-লেবানন-ইরানের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ইরান এবং লেবাননের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা নিহত হয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে পরাশক্তি ইরান। যা এখন রীতিমতো যুদ্ধের দিকেই এগুচ্ছে।
যা গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায়। কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
স্থানীয় সময় বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত ড্যানি ড্যানন এক চিঠিতে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, তারা (ইরান) ইসরায়েলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
তিনি ইরানের প্রতি নিন্দা জানাতে এবং ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, গাজা ও লেবাননে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং আইআরজিসি নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।
এ হামলার কিছুক্ষণ আগেই যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ইরান ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। হোয়াইট হাউসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমন তথ্য জানিয়েছেন বলে সিএনএনের লাইভে বলা হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইঙ্গিত রয়েছে।
বিবৃতিতে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা এই হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি নিচ্ছি।