বিরোধীশূন্য লোকসভায় অনাস্থা ভোটে জয় বিজেপির

0
181
বৃহস্পতিবার ভারতের পার্লামেন্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিটিআই

মণিপুরে চলমান জাতিসংঘর্ষ ইস্যুতে ভারতের লোকসভায় আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব হালে পানি পেল না বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতির দাবিতে অনড় থাকা বিরোধী জোট বৃহস্পতিবার একপ্রকার সমালোচনা হজম করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর জবাবী ভাষণ চলাকালেই অধিবেশন বয়কট করে। এরপর বিরোধীশূন্য লোকসভায় আস্থাভোটে জয় পায় মোদী সরকার।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাষণ দিতে গিয়ে শুরু থেকেই বিরোধীদের চড়া সুরে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, ‘অনাস্থা প্রস্তাব ঈশ্বরের আশীর্বাদ।’ এরপর একটানা দেড়ঘণ্টার বেশি বিরোধী বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর ভাষণের পয়েন্ট ধরে ধরে উত্তর দিকে থাকেন মোদি।

নরেন্দ্র মোদির এমন ভাষণ বিরোধী জোটের পছন্দসই না হওয়ায় অধিবেশনে চলাকালে হই হট্টগোল শুরু করেন ইন্ডিয়া জোটের সংসদ সদস্যেরা। এসময় বিরোধী বেঞ্চ থেকে একাধিকবার ‘মণিপুর, মণিপুর’ ধ্বনি শোনা গিয়েছে সংসদে। একসময় প্রায় দেড় ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাখা হয়ে গেলেও মণিপুর ইস্যুতে একটি বাক্য খরচ না করে শুধুমাত্র বিরোধীদের আক্রমণ শানাতে থাকায় এরপর বিরোধী সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। বিরোধীরা ওয়াকআউট করতেই মণিপুর নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদি সাফ বলেন, ওই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ইচ্ছাই ছিল না বিরোধীদের। সেজন্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভাষণের সময়ে তাঁরা হট্টগোল করেছেন। মোদি বলেন, মণিপুরের পাশে রয়েছে গোটা দেশ। বিরোধীদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের তো একটাই কাজ। দুর্নীতি করো আর পালিয়ে যাও। যদি ধৈর্য ধরতেন তাহলে কেবলমাত্র মণিপুর নিয়েই আলোচনা হতো। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সেই সময়ে শুনতে চাননি বিরোধীরা। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই মণিপুরে শান্তি ফেরাতে চেষ্টা করছে। দোষীদের শাস্তিও দেওয়া হবে। দ্রুত শান্তি ফিরবে সেরাজ্যে। মা-বোনদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, দেশ আপনাদের পাশেই রয়েছে।” বক্তৃতা দিতে গিয়ে মোদি আরও বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে নিজের হৃদয়ের মধ্যে রাখেন তিনি।

নিজের ভাষণে এদিন বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদি সবচেয়ে বেশি কটাক্ষ করেন কংগ্রেসকে। রাহুলের ‘মহব্বত কি দুকান’ মন্তব্যকে এদিন খোঁচা মেরে মোদি বলেন, ‘ওরা বলছে, আমরা ঘৃণার দোকান এবং ওরা ভালবাসার দোকান। কিন্তু ওদের দোকান লুটের আর বাজার মিথ্যের। ওদের দোকানে শিগগিরই তালা পড়বে। ওরা ভারতের দেউলিয়া হওয়ার গ্যারান্টি। কিন্তু আমরা দেশকে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তুলব।’ এসময় রাহুল গান্ধীর ‘অহংকারী রাবণ’ মন্তব্যের জবাবে পাল্টা দেন মোদি। কথার অনুষঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘লঙ্কাকে রাবণের অহঙ্কার ডুবিয়েছে এটা ঠিক কথা, যেমন কংগ্রেসকেও ডুবিয়েছে। রামরূপী জনতা ৪০০ থেকে ৪০-এ নামিয়ে এনেছে ওদের।’

রাহুল কে উদ্দেশ্য করে মোদি বলেন, ‘আসলে আপনার গায়ে জ্বালা একজন গরিবের ছেলে কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে গেল? আপনার তো এখানে বসার কথা ছিল, পরিবারের ইতিহাস মোতাবেক। আপনার জন্মদিন উড়োজাহাজে পালিত হয়। সেই উড়োজাহাজে এখন গরিবদের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ হয়।’

এরপরই জোটকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, “বেঙ্গালুরুতে ইউপিএর শেষকৃত্য করেছেন বিরোধীরা। নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তাদের এনডিএ দরকার। ইন্ডিয়ার অর্থ জানেন? এনডিএর সঙ্গে দুটি ‘আই’ যোগ করেছে অহংকারী বিরোধী জোট। ২৬টি দল ও একটি পরিবারের অহংকারের প্রতীক এই দুটি আই। জোটের নাম ইন্ডিয়া রেখে আসলে ভারত বিদ্বেষের ইঙ্গিত দিয়েছে বিরোধীরা। ইন্ডিয়া নয়, এই জোট আসলে ঘামান্ডিয়া (অহংকারী)। তিনি বলেন, “অহংকারীদের এই জোটে সকলেই প্রধানমন্ত্রী হতে চান। এই জোট আসলে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, তোষণের গ্যারান্টি দেবে। কিন্তু মোদির গ্যারান্টি হল, ক্ষমতায় ফিরে দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে গড়ে তুলব।” তাঁর দাবি, বিরোধীরা দেশের কথা না ভেবে নিজেদের ক্ষমতার কথা চিন্তা করে।

বিরোধীদের বেঞ্চের দিকে ইঙ্গিত করে মোদি বলেন, ‘অনাস্থা প্রস্তাব এনে সংসদে কেমন আলোচনা হয়েছে? ওখান থেকে খালি নো বল উড়ে আসছে আর আমরা সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছি। বিরোধীরা শুধু ফিল্ডিংই করে চলেছে। আর এদিক থেকে সমানে চার-ছক্কা মারা হচ্ছে। দেশের মানুষ বারবার আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু সবসময় আপনারা তাঁদের হতাশ করেন। নিরাশার বদলে বিরোধীরা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি।’

এদিকে আস্থা ভোটের শেষে শাসক দলের প্রস্তাবে লোকসভা থেকে আপাতত সাসপেন্ড করা হয় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে।

লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির সময় ‘দুর্ব্যবহার’র অভিযোগ ওঠে রঞ্জন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে সাসপেনসনের প্রস্তাব আনা হয়। অধীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। তাঁর দাবি, প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করে প্রায়শই সভার কাজে বিঘ্ন ঘটান অধীর। তাঁর কথায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হলেও সে ব্যাপারে কখনও ক্ষমা চান না তিনি, অভিযোগ প্রহ্লাদের। তিনিই অধীর চৌধুরীর আচরণকে ‘অসংসদীয়’ বলে দাবি করে তাঁকে সাসপেন্ড করার আর্জি জানান। তারপরেই প্রায় বিরোধীশূন্য লোকসভায় পাস হয়ে যায় সেই প্রস্তাব। জানা গেছে, প্রিভিলেজ কমিটির কাছে জানানো হয়েছে বিষয়টি। কমিটির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সাসপেন্ডই থাকবেন অধীর চৌধুরী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.