নাশকতার পৃথক চার মামলায় বিএনপির ৪৬ জন নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট, কলাবাগান ও সূত্রাপুর থানার পৃথক চার মামলায় এই রায় দেন আদালত। ঢাকার পৃথক তিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রোববার এই রায় দেন। আসামিরা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর দণ্ড কার্যকর হবে বলেও পৃথক রায়ে বলা হয়েছে।
এ নিয়ে ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৭১টি মামলায় চলতি বছরের ৭ নভেম্বর থেকে অন্তত ১ হাজার ২৭৭ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হলো। বিনা অনুমতিতে রাস্তায় জমায়েত, নাশকতা, সম্পদের ক্ষতি করা, যানবাহনে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর এবং পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
ক্যান্টনমেন্ট থানার মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড
পাঁচ বছর আগের মামলায় বিএনপির ২১ নেতাকর্মীর মধ্যে ১০ জনের প্রত্যেককে পৃথক তিন ধারায় ১৩ মাস করে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আরও ১১ জন খালাস পেয়েছেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালত এ রায় দেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-আবু তালহা, প্রিন্সিপাল লিয়াকত আলী, জিহাদ আল সিফাত, তারিকুর রাজ্জাক ওরফে তারেক, তারিকুল ইসলাম তালুকদার, রনি, তুহিন, কবির, সাদ্দাম হোসেন রাব্বি ও সফুর উদ্দিন ওরফে সফু। দণ্ডবিধি আইনের দুই ধারায় ৬ মাস করে ১২ মাস এবং আরেক ধারায় তাদের এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাশকতার অভিযোগে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
কলাবাগান থানার মামলায় ১৭ জনের কারাদণ্ড
২০১৮ সালে রাজধানীর কলাবাগান থানায় দায়ের করা এক মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদেরকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম এ রায় দেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– সাইদুর রহমান সাঈদ, শ্যামল ভূঁইয়া, মিলন শেখ, জামিল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান নয়ন, হাজী মোহাম্মদ হোসেন আলী, শেখ স্বাধীন মুসলিম ওরফে মোসলেম উদ্দিন, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, জামাল খান, মোস্তফা শরীফ টিপু, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রহিম, নাদিম আহমেদ পাভেল, মেহেদী হাসান বিল্লাল ও মোহাম্মদ সাইফুল ওরফে ভিকেল সাইফুল (দুই জনের নাম পাওয়া যায়নি)। এই মামলায় ১৯ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পান্থপথ প্রধান সড়কে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে অবৈধ সমাবেশ করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পুলিশ বাধা দিলে তাদের ওপর চড়াও হয় এবং সমাবেশ কারীরা পুলিশের সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় ওই দিনই কলাবাগান থানা পুলিশ ১৭ জন ও অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে ৩৬ জনকে আসামি করে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে।
সুত্রাপুর থানার ১ মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড
সূত্রাপুর থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় ১০ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আব্দুস সাত্তার, দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ নাজির, জাবেদ কামাল রুবেল, কাজী মফিজুর রহমান কাওসার, এম এ হক সবুজ, মো. সোহেল, আক্তার হোসেন, মো. ফয়সাল ও কামরুল হাসান নয়ন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুরের ধোলাইখাল প্রধান সড়কে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেআইনি সমাবেশ করে রাস্তায় যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে সমাবেশকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়।
সূত্রাপুরের আরেক মামলায় ৯ জনের কারাদণ্ড
২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীরা মিছিল সমাবেশ করে। মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানা-পুলিশ মামলা দায়ের করার পর তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিচার শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ’র আদালত রোববার নয়জনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আসামিরা হলেন এম এ হক সবুজ, নাজির আহমেদ, আক্তার হোসেন ওরফে আকতু, কাজী মফিজুর রহমান কাওসার, মমতাজুল হক লিটন, ইয়াসিন জাবেদ, কামরুল হাসান নয়ন, মো. সোহেল ও মো. মমতাজ।