কেউ রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, কেউ বিনামূল্যে ওষুধপত্র ও খাবার সরবরাহ করেছেন; কেউ বা আক্রান্তদের পাশে থেকে দেখাশোনা করেছেন। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা মেলে এমন চিত্রের। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আক্রান্তদের সেবায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মহানগর শাখা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসসহ বিভিন্ন সংগঠনকে বুথ বসিয়ে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।
বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের জন্য রক্ত সংগ্রহ, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া ও আহত ব্যক্তিদের নির্বিঘ্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত হতাহত ও তাঁদের স্বজনের সহযোগিতায় পাশে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিছু নেতাকর্মীকে ‘রক্ত লাগলে যোগাযোগ করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়াতেও দেখা যায়।
এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তথ্যকেন্দ্রে কথা হয় ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক উপসম্পাদক ডি এম সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক রক্তদাতা রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ৫১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ ও ২২ জনকে রক্ত দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। আমরা আহতদের সহায়তায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া ১৫ জন রোগীকে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ দেশের মানুষের যে কোনো সংকটে-প্রয়োজনে ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ভরসার ঠিকানা হয়ে থাকবে সব সময়। এ সেবা চলমান থাকবে।
এ ছাড়া সহযোগিতার হাত বাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগও। একশর বেশি রোগীকে তাঁরা কাটাছেঁড়ার সরঞ্জাম সরবরাহ, খাবার পানি ও আর্থিক সহযোগিতা এবং সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। সংগঠনটির সভাপতি আফজালুর রহমান বাবু বলেন, মানুষের সেবায় এগিয়ে যাওয়াই আমাদের মহান ব্রত। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো সহযোগিতা করেছি।
বিস্ফোরণে হতাহতদের সেবা দিতে রক্ত সংগ্রহ ও যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক টিম গঠন করে ছাত্রদল। তারা অক্সিজেন সেবা ও ওষুধ সরবরাহ করে। তাদের সমন্বয়ক টিমে ছিলেন ঢাবি শাখার সিনিয়র সহসভাপতি ইজাজুল কবির রুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সহায়তা বুথ স্থাপন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত এই বুথ থেকে তাঁরা ১৩ রোগীর বিনামূল্যে ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেন, ছয়জনকে রক্তদান করেন এবং পাঁচ শতাধিক মানুষকে ডিম-খিচুড়ি ও খাবার পানি দিয়ে সহযোগিতা করেন বলে জানান সংগঠনের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মামুনুর রশীদ।
সংগঠনের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, মানবিক বিপর্যয়ে পাশে দাঁড়ানো মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য। আর সংগঠন থেকে আমরা যেমন মানুষের অধিকারের জন্য লড়ি, তেমনি মানবিকতায় পাশে দাঁড়াই।
গণমাধ্যমে খবর দেখে সিদ্দিকবাজারে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যান ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীও। সেখান থেকে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসেন এবং রোগীদের রক্তদান, সার্বিক সহযোগিতা, অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা ও মর্গ থেকে লাশ রোগীর আত্মীয়দের হস্তান্তর করতে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর পূর্বের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম বলেন, আমরা আটজনকে রক্তদান করেছি এবং তিনজনকে অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দিয়েছি। এ ছাড়া লাশ আত্মীয়দের হাতে পৌঁছে দিতে সহায়তা করি।
সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের দায়িত্বশীলরাও। সংগঠনের সভাপতি বিলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ১২ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন