বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উদ্যোগে প্রীতি সম্মেলন ও বার্ষিক বনভোজনে বক্তব্য রাখেন শ্রীজ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয়(সন্তু) লারমা। আজ তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন “আমাদের সিদ্ধ চাউলের ভাতের মতো ঝরঝরা হলে চলবে না, আমাদের বিনি ভাতের মতো একতাবদ্ধ ; আমাদের ঐক্য ও সংহতি সেরকমই হওয়া দরকার।’’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রীতি সম্মেলনে সন্তু লারমা আরো বলেন, ‘‘আমাদের কেউ ছুঁড়ে ফেলে দিলে, দাঁড়িয়ে থাকার মতো মনের জোর থাকতে হবে। আমাদের ভয় পেলে চলবে না। আমাদের জীবনটা এমনিতেই নানা দুঃখে ভরপুর। সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে আমাদের যেটা সবচেয়ে দরকার, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের সমাজের মধ্যে তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যে তেরো ভাষাভাষী চৌদ্দটি জাতিগোষ্ঠী আমরা রয়েছি, এই চৌদ্দটি জাতির মধ্যে যে ঐক্য ও সংহতি রয়েছে, সেই ঐক্য ও সংহতি ভালো থেকে অধিকতর ভালো করতে হবে।”
সন্তু লারমা জীবন সংগ্রাম ও অধিকার বিষয়ে আরো বলেন, “এই বাস্তবতা আমাদেরকে বুঝতে হবে। আমাদের বেঁচে থাকার যে অবস্থান, সেই আমাদের বেঁচে থাকার অবস্থানটা আজ আমাদের হাতে নেই। এটা নিয়ে লজ্জা আর ভয়ে থাকলে তো হবে না। এটার জন্য মনের কথা খুলে বলতে হবে। আমাদের সামনের জীবনটা যাতে ভালোভাবে কাটাতে পারি, সেটা ভাবার দরকার রয়েছে। বিশেষ করে এখানে যাদের ছেলেমেয়ে রয়েছে, যারা তরুণ, তাদেরকে উৎসাহিত করা দরকার।
সুশীল সমাজের প্রতি সন্তু লারমার বক্তব্য- ‘আমরা দেখি যারা শিক্ষিত, যারা চাকরি করছে, যারা অঢেল টাকা-পয়সা নিয়ে ব্যবসা করছে, যারা সমাজে নিজেদের নেতৃস্থানীয় বলে দাবী করে, তাদের ভেতরেই বেশি ব্যক্তিস্বার্থপরতা কাজ করে। আজকে তাদের বেশি ভাবা দরকার যে, আজ যদি জাত বেঁচে না থাকে, এখানকার মানুষগুলোর যদি সমাজ সংস্কৃতি বেঁচে না থাকে, তাদের সেই অঢেল টাকা-পয়সা, সম্পদ থাকলেও কি তারা এখানে বেঁচে থাকতে পারবে? আমরা কি বলতে পারবো যে, সে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেঁচে আছে?
তিনি আরো বলেন, ‘আজকে আমাদের জীবনের বাস্তবতাটা যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেই বাস্তবতা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আমরা মানুষ হিসেবে আমাদের মান-মর্যাদা, অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে আমাদের যে অধিকার, সে অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। আজকে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন, আমরা সবাই ভুক্তভোগী। আমরা বর্তমানে যে বাস্তবতায় রয়েছি, জীবন কাটাচ্ছি, সে বাস্তবতা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে।
প্রীতি সম্মেলনে সন্তু লারমা যে আহবান জানান, ‘আমরা পিকনিক করবো, আমরা একত্রিত হবো, আমরা প্রীতি সম্মেলন করবো, আমরা গাইবো, আমরা নাচবো, আমরা হাসবো; কিন্তু আমাদের যেটা সবচেয়ে জরুরী দরকার, আমাদের অধিকারের জন্য, আমাদের জীবন ও সংস্কৃতি নতুনভাবে সাজিয়ে নেওয়ার জন্য, সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে জুম্ম জনগণকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেই অধিকার আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। কারা ঘেরাও করে রেখেছে সেটা আমরা ভালো বুঝি। সেই ঘেরা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসি ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সভাপতি ও প্রাক্তন উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসি ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু সন্তোষিত চাকমা বকুল, লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয়কেতন চাকমা, প্রসন্ন কুমার চাকমা, ইন্দুলাল চাকমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসি ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার। এই বনভোজন অনুষ্ঠানে কয়েকশত জন শুভাকাংখী অংশ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে বার্গি লেক, ঝগড়া বিল, রাঙ্গামাটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কপ২৯ প্রেসিডেন্সি কর্তৃক প্রকাশিত নতুন যৌথ পরিমাণগত লক্ষ্য (এনসিকিউজি) বিষয়ক সর্বশেষ খসড়া...
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাইকোর্টে নতুন করে শুরু হওয়া চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং বিচারিক আদালতের রায়ের...
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজল মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে নেয়া হচ্ছে। রোববার (১৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে তাকে বহনকারী এয়ার...