বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে বের হওয়ার বর্ণনা দিলেন বেঁচে যাওয়া যাত্রী

0
18
বিষ্ণু কুমার রমেশ এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, ছবি: এএফপি

ভারতের আহমেদাবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত লন্ডনগামী উড়োজাহাজটিতে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া সবারই মৃত্যু হয়েছে। প্রাণে বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তিটি হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিষ্ণু কুমার রমেশ। বয়স ৪০ বছর।

আগুনের গোলার মতো বিস্ফোরিত হওয়া ওই উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে অলৌকিকভাবে বের হয়ে আসেন বিষ্ণু কুমার। আজ শুক্রবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভারতের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ডিডি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথা বর্ণনা করেছেন রমেশ।

জ্বালানিতে পরিপূর্ণ এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা করেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই এটি বিস্ফোরিত হয়।

বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, উড়োজাহাজের ১১এ নম্বর আসনে বসেছিলেন রমেশ। তাঁর ভাইও ছিলেন একই উড়োজাহাজে। যুক্তরাজ্যে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রমেশ বলেন, ‘উড্ডয়নের এক মিনিটের মধ্যেই হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা আটকে গেছে। আমি বুঝতে পারলাম, কিছু একটা ঘটেছে। তারপর হঠাৎ করে উড়োজাহাজের সবুজ আর সাদা আলো জ্বলে উঠল। এরপর মনে হলো উড়োজাহাজটি আরও জোরে ছুটছে। এটি সোজা গিয়ে একটা হাসপাতালের হোস্টেলে গিয়ে ধাক্কা খেল। আমার চোখের সামনেই উড়োজাহাজটা বিধ্বস্ত হলো।’

রমেশ এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে তাঁর শরীরের পোড়া ক্ষত ও আঘাতের চিকিৎসা চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ শুক্রবার হাসপাতালে রমেশকে দেখতে যান। মোদির ইউটিউব চ্যানেলে এর ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের খবরে বলা হয়েছে, রমেশের বয়স ৪০ বছর। তিনি যুক্তরাজ্যের লেস্টার শহরের বাসিন্দা। বার্তা সংস্থাটি রমেশের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে।

গতকাল উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর এলাকার কাছাকাছি একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে।

রমেশ বলেন, ‘শুরুতে ভেবেছিলাম, আমিও মারা যাচ্ছি। কিন্তু পরে যখন চোখ খুললাম, বুঝলাম, এখনো বেঁচে আছি।’

বিষ্ণু কুমার রমেশকে হাসপাতালে দেখতে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
বিষ্ণু কুমার রমেশকে হাসপাতালে দেখতে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ছবি: এএফপি

রমেশ আরও বলেন, ‘আমি সিটবেল্ট খুলে বেরোনোর চেষ্টা করলাম এবং পারলামও। আমার মনে হয়, আমি উড়োজাহাজের যে পাশটায় ছিলাম, সেটি হোস্টেলের দিকে ছিল না। আমি যেখানে নামলাম, সেটি মাটির কাছাকাছি ছিল এবং সেখানে ফাঁকা জায়গাও ছিল। আমার পাশের দরজাটা ভেঙে পড়ার পর দেখলাম, বাইরে জায়গা আছে। আর তখনই ভাবলাম, চেষ্টা করলে বেরিয়ে যেতে পারি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিষ্ণু রক্তমাখা টি-শার্ট পরে পা টেনে টেনে হাঁটছেন এবং নিজেই অ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিষ্ণু বলেন, ‘আগুনে আমার বাঁ হাতটা সামান্য পুড়ে গেছে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাকে হাসপাতালে আনা হয়। এখানকার লোকজন খুব ভালোভাবে আমার দেখভাল করছে।’

এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করা উড়োজাহাজটিতে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও ১ জন কানাডীয় যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া বিমানে ছিলেন ১২ জন ক্রু সদস্য।

পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৬৫–তে দাঁড়িয়েছে।

উড়োজাহাজের আরোহীরা ছাড়াও উড়োজাহাজটি যেখানটায় আছড়ে পড়েছে, সেখানেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.