২০২২ সাল জুড়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয় দেশবাসীকে। বাসা-বাড়ি থেকে শিল্প-কারখানা সব খাতেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলা করতে হয়। আসন্ন গরম ও সেচ মৌসুমেও বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংকট ভোগাতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্নিষ্টদের। ২০২২ সালে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম এক দফা বাড়ানো হয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভর্তুকি কমাতে ২০২৩ সালেও গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে।
বিশ্ববাজারে দাম না কমলে গ্যাস আমদানি বাড়াবে না সরকার। ফলে জ্বালানি সংকট ভোগাবে সবাইকে। গ্যাস ঘাটতির প্রভাব ফেলবে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। সরকার বলছে, গ্যাস সংকট থাকলেও একাধিক বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন সংকট হবে না।
চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম চড়া থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তাও নাগালের বাইরে চলে যায়। ভর্তুকির লাগাম টানতে গত জুলাই থেকে সরকার খোলাবাজার থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি সরবরাহকারী কাতার ও ওমানের কোম্পানিও এলএনজি রপ্তানি কমিয়ে দেয়। ফলে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দৈনিক সরবরাহ কমিয়ে দেয়। মার্চেও যেখানে দিনে গড়ে ৭০ কোটি ঘনফুট এলএনজিসহ ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হতো তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ২৬০ কোটি ঘন ফুটে নেমে আসে। বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে গ্যাস রেশনিং শুরু করে সরকার। কমে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন। জুলাইয়ের পর থেকে লোডশেডিং বাড়তে থাকে। সরকার ঘোষণা দিয়ে সূচি ধরে লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেয়। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় তাও মানা সম্ভব হয়নি। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং দেখে দেশ। নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পায়। এরপর লোডশেডিং কমে যায়। আগামী মার্চ থেকে গরম পড়বে। সঙ্গে সেচ মৌসুম শুরু হবে। মার্চের শেষ দিকে শুরু হবে রমজান মাস। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর সূত্র বলছে, সে সময় বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুখবর দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। কারণ, দাম না কমলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনবে না সরকার। তবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। মার্চ থেকে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে। সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শুরু হওয়ায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় চলবে। ফলে বিদ্যুৎ সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সংকটের মধ্যেও ২০২২ সালে জ্বালানিতে খরচ বেড়েছে গ্রাহকদের। গত ৫ জুন গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ২৩ শতাংশ। ৫ আগস্ট ডিজেল-পেট্রোলের দাম রেকর্ড পরিমাণ ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। এতে গাড়ি ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। যদিও ২৯ আগস্ট লিটারে মাত্র ৫ টাকা করে কমানো হয়। ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর গণশুনানি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে। আইএমএফের ঋণ পেতে ভর্তুকি কমানোর চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। তাই বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্নিষ্টদের। এরমধ্যেই আইন সংশোধন করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছ থেকে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে।