শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, দেশে যে রাজনীতি চলছে, এটি এককথায় অস্বাভাবিক। তবে বিদেশি শক্তি এখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবে, সেটি আশা করার কোনো কারণ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্মারক বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবুল কাসেম ফজলুল হক এ কথা বলেন। এই স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টার।
দীর্ঘ এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেওয়া বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ-বিদেশের রাজনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও অতীতের পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনীতির অবস্থা উন্নত করা দরকার, রাজনীতি উন্নত করা দরকার। কীভাবে এটা করা সম্ভব, চিন্তা করতে হবে। রাজনীতির অবস্থা যতটা অনুভব করা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। আর বিদেশি শক্তি এখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবে, এটা আশা করার কোনো কারণ নেই। আজকে যুক্তরাষ্ট্র আসছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আসছে তাদের স্বার্থে, ব্রিটিশরা আসছে তাদের স্বার্থে। তারা দেখবে তাদের স্বার্থ কী করে সাধন করা যাবে, সে চিন্তা থেকে তারা একটি ফর্মুলা দেবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে চাইবে না।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে চিন্তা করা দরকার। গণতন্ত্রের কথা সবাই জোর দিয়ে বলছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের চিন্তাভাবনা নেই।
আবুল কাসেম ফজলুল হক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সময়টি আমরা পার করছি, এ সময়ে শ্রদ্ধাযোগ্য মানুষের খুব ঘাটতি আছে। নানা রকম দলাদলি, নানা রকম স্বার্থের সংঘাত—এগুলোর মধ্যে কোনো মানুষকে সম্মানজনক অবস্থায় রাখার মতো বুদ্ধিজীবী কমিউনিটি কিংবা পলিটিক্যাল কমিউনিটি আমাদের নেই। কিন্তু এ বাস্তবতার মধ্যেও কেউ কেউ ভালো মানুষ আছেন। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকেও সেভাবে বিচার করা দরকার। মানুষ তো ত্রুটিবিচ্যুতির মধ্যেই মানুষ হয়। একেবারে ত্রুটিমুক্ত কোনো মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে না। অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি ভুলে যাওয়া উচিত, তাহলেই আমরা ভালোটি নিয়ে সামনে এগোতে পারব।’
এ সময় এমাজউদ্দীন আহমদের জীবনীগ্রন্থ প্রকাশের জন্য আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ করেন আবুল কাসেম ফজলুল হক।
সভাপতির বক্তব্যে এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টারের সভাপতি এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, এখন যে সময়টি অতিক্রম করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সংকটাপন্ন ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময়ে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বেঁচে থাকলে তাঁর কাছ থেকে নতুন দিশা পাওয়া যেত।
স্বাগত বক্তৃতায় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের জন্ম থেকে শুরু করে তাঁর কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন তাঁর মেয়ে অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।
সাংবাদিক ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ছেলে জিয়া হাসান ইবনে আহমদ, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শেখ আবদুর রশীদ ও সালেহ মাহমুদ, আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম ইয়াকুব আলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইফতেখারুল আলম, গবেষক মনোয়ার শামসী, শিক্ষক আবদুল হাই ও মিজানুর রহমান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ আবদুল হালিম ও আয়োজক সংগঠনের পক্ষে আবুল কাশেম হায়দার।